ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:২৬ এএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৯ পিএম
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর রায়পুরায় শুরু হয়েছে বালু সরবরাহের কাজ। সোমবারের চিত্র। প্রবা ফটো
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বহুল প্রতীক্ষিত ছয় লেনের কাজ শুরুর তিন দিনের মধ্যেই চাঁদা দাবির অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মহাসড়কের কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে নরসিংদীর মারকো ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত বালু সরবরাহ কাজে এই চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কাজ বন্ধ রেখে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ঢাকা সিলেট করিডোর সড়ক বিনিয়োগ প্রকল্প সিক্স লেনের কাজটি ১৩টি প্যাকেজের আওতায় সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজের কাজের দায়িত্ব পান। প্যাকেজ নং : ডিএস-৪ এর আওতায় বালু সরবরাহসহ ধাপে ধাপে সড়কের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। প্যাকেজ নং : ডিএস-৪ এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১৮৭ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৫ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর।
বালু সরবরাহের জন্য হেগো-মীর আক্তার জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স মৌসুমি ড্রেজিং প্রকল্প ও নৌ পরিবহনের কার্যাদেশ প্রদান করেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রহ্মপুত্র ব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ নামাপাড়া নদীর পাড়ে বালু সরবরাহের কাজ শুরু করে মেসার্স মৌসুমি ড্রেজিং। প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ, কাজের শুরুতেই রায়পুরার মাহমুদাবাদ, রামনগর, নীলকুঠি ও মির্জাপুরের কিছু বালু ব্যবসায়ী বালু আনলোডে বাধা প্রদান করেন। কাজের জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করেন। তাদের চাহিদার চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত শুক্রবার বিকালে প্রায় লোকজন দা বল্লম ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বাধা প্রদান করে এবং আনলোড ড্রেজার ভাঙচুর, টাকা ও তেল লুটপাট করে ড্রেজারের ম্যানেজার ও শ্রমিকদের ওপর হামলা ও মারধর করে আহত করেন। হামলা থেকে বাঁচতে শ্রমিকরা নদী সাঁতরিয়ে ভৈরব প্রান্তে চলে এলে তারা নৌকা নিয়ে এসে পুনরায় মারধর করে চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বালু আনলোডে বাধা, হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় ওইদিন রাতেই মেসার্স মৌসুমি ড্রেজিং প্রকল্পের ম্যানেজার নাঈম আলসিন বাদী হয়ে রায়পুরা থানায়, ভৈরব থানা ও নৌ থানা তিনটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এজাহারে মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহীকে প্রধান অভিযুক্ত করে স্থানীয় নেতা তাহের মিয়া ও ওবায়দুলসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ্সহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমি কোনো ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে জড়িত নই। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আমার এলাকার বালু ব্যবসায়ীদের নিয়ে মৌসুমি ড্রেজিং-এর মালিক মিন্টু মিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিষয়টি সুরাহা করতে না পাড়ায় আমাদের এমপি রাজিউদ্দিন রাজু মহোদয়কে অবগত করেছি। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বালু আনলোড না করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা তা মানেনি। বাধা দেওয়ার খবর শুনে তাদেরকে ফোন করে ফিরিয়ে আনি আমি। তারপরও যদি কেউ সরকারি কাজে বাধা দেয় সেটা তাদের নিজ দায়িত্বে করতে হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-পুলিশ ইউনিটের ইনচার্জ (এসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, ড্রেজার ও শ্রমিকদের ওপর হামলা করেছে অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সরকারি কাজে কেউ বাধা দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে মেসার্স মৌসুমি ড্রেজিং প্রকল্পের মালিক মোশাররফ হোসেন মিন্টু বলেন, রায়পুরায় উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা না দেওয়ায় আমার ড্রেজার ভাঙচুর, লুটপাট ও শ্রমিকদের মারধর করে আহত করে।
এ বিষয়ে ঢাকা-সিলেট করিডোর মহাসড়ক বিনিয়োগ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শেরশাহ ফরিদ বলেন, শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছি। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।