গাজীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫৪ পিএম
হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক। ছবি : সংগৃহীত
শিল্পনগরী টঙ্গীতে অবস্থিত দেশের অন্যতম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। গত এক সপ্তাহ ধরে কারখানার এক কর্মকর্তাকে মারধর ও মালিকের ব্যবসা গুটিয়ে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগের ঘোষণায় উৎকণ্ঠায় পড়েছেন শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কারখানার প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) মুশফাকুর রহমান রুমেলের বিরুদ্ধে কোম্পানির কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার মুশফাকুর কারখানায় গেলে তাকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এমন সংবাদ পেয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর চাচা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান মতি দলবল নিয়ে কারখানার ভেতরে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন এবং মুশফাকুরকে ছাড়িয়ে নেন।
এ ঘটনার পর হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, তার চাচা আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ ও বিষোদগার করেন। এ ছাড়া লাইভে তাকে বলতে শোনা যায়, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি আমার বাবার বন্ধু। প্রতিমন্ত্রী, তার চাচা মতিউর ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরু আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বেআইনিভাবে টাকা পয়সা নিতেন। তারা এ পর্যন্ত এক হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন।
গত শনিবার ফেসবুক লাইভে তমিজি হককে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলতে দেখা যায়। এ ঘটনায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। গত রবিবার মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে মালিকের এমন আচরণে উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে শ্রমিকদের। কারখানার একাধিক কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে এমনিতেই চাকরি পাওয়া কষ্ট, এর মধ্যে জিনিসপত্রের দাম বেশি। মালিক ও কর্মকর্তাদের মধ্যকার ঝামেলার কারণে কী সমস্যা তৈরি হয়, বলা যাচ্ছে না। মালিক না থাকলে প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলবে সেটি নিয়েও তাদের প্রশ্ন।
হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (লিগ্যাল) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘কারখানার কাজ চলমান রয়েছে। শ্রমিকদের উৎকণ্ঠায় থাকার কারণ নেই। বহিরাগত কোনো সমস্যাও আর সৃষ্টি হবে না। বেতন-ভাতাও তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেয়ে যাবেন।’
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে আদম তমিজি হক ফেসবুকে লেখেন, ‘শয়তানের সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল মানবজাতিকে বোঝানো যে তার অস্তিত্ব নেই। আর সিন্ডিকেটের সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল আমার ও নেত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা। কিন্তু আমার মা শেখ হাসিনা আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলেন না, আমার দেশত্যাগে নিষেধ করেননি। আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছুই করেননি।’ এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট চেয়ে একটি ভিডিও ফেসবুক শেয়ার করেন।
এসব বিষয়ে জানতে তমিজি হকের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কিছুই বলতে পারব না। তিনি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’
তবে বিষয়টি নিয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। মঙ্গলবার তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘তিনি (আদম তমিজি হক) ফেসবুকে কী দাবি করেছেন সেটা বলতে পারব না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না জানি না। আমরা আমাদের কাছ করে দিয়েছি। বাকিটা সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র।’