রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৩ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬ পিএম
আখাউড়া বড় বাজারের সবজি দোকান। মঙ্গলবার সকালে তোলা। প্রবা ফটো
‘আর পারছি নারে ভাই। কী যে করি। তিন মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে আমার সংসার। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। এ টাকা দিয়ে চাল কিনুম, না নুন কিনুমরে ভাই।’ কথাগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার রিকশাচালক দুলাল মিয়ার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
একটি চায়ের দোকানে বসে কথা হয় দুলালের সঙ্গে। তিনি জানান, মাসে আয় ১৩-১৪ হাজার টাকা। দুই মেয়ে স্কুলে আর এক মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের পেছনেই মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার যায়। বাচ্চারাসহ নিজেদের কিছু ওষুধ লাগে। সব মিলিয়ে ওষুধের পেছনে মাসে খরচ যাচ্ছে ২ হাজার টাকা। আর বাকি থাকে ৫-৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি তার স্ত্রী বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করে সংসারে কিছু সহযোগিতা করেন। তরকারি, তেল, নুন, মরিচ খরচ তো সবই বাড়ছে। প্রতিদিন আলুর ভর্তা আর সামান্য ডাল দিয়ে চলে সংসার। দুলাল বলেন, ‘আলুর যে দাম বাড়ছে, তাতে আলুও মনে হয় আর খাওয়া যাবে না। মাসে একদিন একটু মাছ আর একদিন একটু ব্রয়লার মুরগি খাইতাম। মাছ, মুরগির দাম বাড়ায় তা-ও বন্ধ হয়ে গেছে। রোজগার না বাড়লেও খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। সীমিত আয়ে সংসারের খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে।’
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফরিদ উদ্দিন ভূঁইয়া বর্তমানে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন। গতকাল সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের বড় বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে যান বাজার করতে। দুই কেজি আলু ১১০ টাকা, বেগুন এক কেজি ৬০ টাকা, কচুরমুখী এক কেজি ৭০ টাকা, হাফ কেজি শিম কিনলেন ৮০ টাকা দিয়ে। এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন ৭০ টাকা দিয়ে। রসুনের দাম অতিরিক্ত থাকায় মাত্র ৫০০ গ্রাম কিনেছেন ১১০ টাকায়। স্ত্রী বলেছিলেন তরিতরকারির পাশাপাশি কাঁচামরিচ কিনতে। কিন্তু চার ধরনের তরকারি আর রসুন, পেঁয়াজ কেনার পর ফরিদের পকেট ফাঁকা। ২০০ গ্রাম কাঁচামরিচের দাম ৫০ টাকা। শেষে দোকানিকে এক কেজি আলু ফেরত দিয়ে ২০০ গ্রাম মরিচ কিনে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
আখাউড়া পৌর শহরের বড় বাজার, সড়ক বাজার, খড়মপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন মাস আগের তুলনায় শাকসবজির দাম অনেক বেড়েছে। গত সপ্তাহের ৪০ টাকার আলু এখন ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ২৫০ টাকা, করলা ৬০, পটোল ৬০, ঢেঁড়স ৫০, বেগুন ৬০, কচুরমুখী ৬০, টমেটো ১২০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ এবং চাল কুমড়া ও লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম ওঠানামা করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পুঁইশাক, কলমিশাক, লালশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কম থাকলে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম কমবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
আখাউড়া বড় বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মোশাররফ বেপারী বলেন, সবজির দাম বাড়ার কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা লেগেই থাকে। তার দাবি, বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই। দাম বাড়ার জন্য তিনি সবজির পাইকারি আড়তদারদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে, দাম বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়লেই তা কমে যাবে। আখাউড়ায় পাইকারি সবজি বিক্রেতা লোকনাথ সবজি ভাণ্ডার ও সততা ট্রেডার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছয় মাস আগের দরের সঙ্গে তুলনা করলে শাকসবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি বছর এ সময় শাকসবজির দাম কিছুটা বাড়ে। শাকসবজির ৯০ শতাংশের বেশি আসে ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে। এজন্য দাম বেশি।
আখাউড়া বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কানু মিয়া বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও মাছ ধরা পড়ছে না। নদীর মাছ প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চাষ করা ছোট রুই, মাঝারি সাইজের কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প ও ব্রিগেড মাছ দুই মাস আগে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত। এখন ৩০০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। ১৫০ টাকার পাঙাশ এখন ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক মাছ ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, স্থানীয়ভাবে মাছের জোগান কম। দেশি মাছ সামান্য কিছু এলেও অনেক দামে বিক্রি হয়। চাষ করা মাছ আনা হয় ভৈরব, ময়মনসিংহ থেকে। যাতায়াত খরচ বেশি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
শাকসবজি ও মাছের দাম বাড়ার বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছি। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করলে তদারকি করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।