রিপন আকন্দ, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৫ এএম
কামরান নাহিদ।
গাইবান্ধা শহরের ডেভিড কোম্পানি পাড়ার বাসিন্দা কামরান নাহিদ। পেশায় খামারি। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় ২০ বছর ধরে মরদেহের গোসল করান এই যুবক। খবর পেলেই মৃত মানুষের বাড়িতে ছুটে যান। শেষবিদায়ের গোসলের দায়িত্ব নেন। ধর্মীয় রীতি মেনে পরিশুদ্ধ গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। দীর্ঘদিন ধরে নিজ হাতে দুই শতাধিক মৃত মানুষের গোসল করিয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মরদেহের গোসল করাতে চান বলে জানান তিনি।
কিশোর বয়সে বাবা গোলাম সরওয়ারের কাছ থেকে মরদেহ গোসলের নিয়মকানুন শেখেন কামরান নাহিদ। তিনি জানান, বাবার সঙ্গে অসংখ্য মরদেহের গোসলে সহযোগিতা করেছেন। বাবার মৃত্যুর পর মরদেহ গোসলের কাজটি দায়িত্বের সঙ্গে করে আসছেন। করোনা মহামারির সময় আক্রান্ত মরদেহের গোসল করাতেও পিছপা হননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করিয়েছেন শেষবিদায়ের গোসল। মরদেহের গোসল করানো সওয়াবের কাজ। এখানে ভয়ের কিছু নেই। সমাজের ধর্মপ্রাণ যুবকদের সামাজিক ও মানবিক এই কাজে অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে কামরান নাহিদ বলেন, ‘শৈশবে দেখেছি বাবা মরদেহের গোসল করাতেন। বাড়ির আশপাশে কেউ মারা গেলে মুরব্বিরা বাবাকে ডাকতেন। ২০০২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বলতেন, মরদেহ গোসলের কাজে দুয়েকজন লোক দরকার হয়। অনেক সময় অন্য লোকজনকে ডাকলে আসতে চায় না। তুমি সঙ্গে থাকলে সাহায্য হবে, মানুষের উপকার হবে। তখন থেকেই বাবার সাথে মরদেহ গোসলের কাজে যেতাম। বাবা বলতেন, এটা সামাজিক ও ধর্মীয় কাজ। এ কাজে অনেক সওয়াব আছে। পাশাপাশি মানুষের ভালোবাসাও পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত ২০০২ সাল থেকেই পুরোপুরিভাবে মরদেহের গোসলের কাজে সম্পৃক্ত হই। বাড়ির আশপাশে কেউ মারা গেলে গোসলের ব্যবস্থা করতাম। সেই থেকে আজ পর্যন্ত করে আসছি। করোনা মহামারির মধ্যেও করেছি। করোনা আক্রান্ত মরদেহের গোসল দিয়েছি, কাফনের কাপড় পরিয়েছি, অনেক সময় দাফনেও অংশ নিয়েছি। মূলত বাবার কাছে অনুপ্রেরণা পেয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণÑ দুদিক চিন্তা করেই এ কাজের সঙ্গ যুক্ত। যখন জানতে পারি মরদেহ নিয়ে কেউ বসে আছে, দ্রুত সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর ইসলাম সুমন বলেন, ‘কামরান যে কাজটা করে, এটা নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি, সে মৃত মানুষের গোসল দিয়ে আসছে। এলাকার কেউ মারা গেলে তাকেই ডাকা হয়। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মরদেহের গোসল করায় কামরান।’
জুয়েল মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘কেউ মারা গেছে ফোন পেলেই কামরান সে বাড়িতে ছুটে যান। আন্তরিকতার সাথে গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। আগে তার বাবার সাথে এই কাজ করতেন। বাবার মৃত্যুর পর কামরান নিজেই এ কাজ করছেন। সুনামও কুড়িয়েছেন তিনি।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলামিন বলেন, ‘মৃত মানুষের গোসল করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। যে এই কাজ করবে, দুনিয়া ও আখিরাতে সে সম্মানের পাত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। হাদিসে আছেÑ মরদেহের গোসল করানো ব্যক্তির গুনাহ একবার নয়, চল্লিশবার পর্যন্ত আল্লাহ মাফ করে থাকেন। এ কাজে কামরানের পাশাপাশি অন্য যুবকদের এগিয়ে আসা উচিত।’