সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৯ পিএম
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:০৬ পিএম
ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ি দুর্গের ভগ্নদশা। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
ভাটির রাজা ঈশা খাঁ। মোগল ঐতিহাসিক আবুল ফজল এবং মির্জা নাথানের ইতিহাসভাষ্যে যে ‘দাওয়াজদাহ বুমি’ অর্থাৎ ‘বারো ভূঁইয়া’র কথা উঠে এসেছে, তাদেরই একজন এই দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতাকামী এই রাজার দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জঙ্গলবাড়ি। ঈশা খাঁ দুর্গ নামেও এটি সুপরিচিত সবার কাছে।
প্রতিদিন এ দুর্গ দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে অনেক মানুষ। বিদেশি পর্যটকরাও দেখে যান, ভাটিবাংলায় মোগল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এই জমিদারের দুর্গ। পশ্চিমে ইছামতী নদী, দক্ষিণে গঙ্গা (পদ্মা) নদী, পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সিলেটের বানিয়াচং পর্যন্ত সুবিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে বারো ভূঁইয়ার ভাটিবাংলা। বারো ভূঁইয়ার অগ্রণী ঈশা খাঁ ছিলেন অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা, ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার অধিকাংশ অঞ্চল, নোয়াখালী, ফরিদপুর, পাবনা ও রংপুর জেলার অংশবিশেষ এবং সিলেটের পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত এক বিশাল রাজ্যের স্বাধীন অধিপতি।
জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলার বারো ভূঁইয়ার অবিসংবাদিত নেতা ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁর কাছে খিজিরপুরে। মোগল সুবেদার মানসিংহের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি খিজিরপুর থেকে এসে আশ্রয় নেন ব্রহ্মপুত্র ও শঙ্খ নদের তীরবর্তী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলাধীন এগারসিন্দুরে। সেখানে তিনি সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করেন। এ ঘটনার পর ঈশা খাঁ কোচ রাজা লক্ষণ সেন হাজরার রাজধানী জঙ্গলবাড়ি দখল করে নেন এবং সেখানে তার রাজধানী স্থানান্তর করেন।
অনেকেই মনে করেন, লক্ষণ সেন হাজরা ও ঈশা খাঁ দুজনের কেউই জঙ্গলবাড়ি দুর্গটির মূল নির্মাতা নন। কারণ এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনাবলি সম্ভবত প্রাক-মুসলিম আমলের। এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ জনবসতির কেন্দ্র। দুর্গের ভেতরে বেশকিছু স্থাপনা রয়েছে ঈশা খাঁর। আছে তার বাসভবনের ধ্বংসাবশেষ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হালিমা আফরোজ বলেন, দুর্গের সমস্ত ভূমির দখল ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বুঝে পেয়েছে। আগের অবয়ব ঠিক রেখে উন্নয়নকাজের নকশা প্রণয়নসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। আশা করছি, দেশের অন্যতম এই প্রত্নতত্ত্ব রক্ষা ও সংরক্ষণের কাজ দ্রুতই শুরু হবে।