× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সৈয়দপুর বিমানবন্দর

ব্যবস্থাপকের নানা অনিয়মে হুমকিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৯ পিএম

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:০০ পিএম

সৈয়দপুর বিমানবন্দর। ছবি : সংগৃহীত

সৈয়দপুর বিমানবন্দর। ছবি : সংগৃহীত

ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষের নানা অনিয়ম, ঘুষ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও কেপিআই নীতিমালা ভঙের কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিমানবন্দর সৈয়দপুরে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ওঠে। একাধিকবার বদলি করা হলেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনেও সুপ্লব কুমারের দুর্নীতি-অনিয়মসংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে তার দাবি, অভিযোগগুলো অনেক পুরোনো। এর সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং তিনি ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন গ্রেডিংয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম অবস্থানে আছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সুপ্লব সৈয়দপুর বিমানবন্দর পার্কিং এলাকায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ড্রাইভারদের কাছ থেকে নিয়মিত উৎকোচ নেন। বিমানবন্দর লাউঞ্জ ও রেস্টুরেন্টগুলো থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন। কার পার্কিংয়ের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন। সুপ্লবের বিরুদ্ধে নীলফামারী জেলা জজ আদালতে তিনটি মামলা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরের চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণকাজে ব্যবস্থাপকের দায়সারাভাব লক্ষণীয় এবং কাজের মানও অত্যন্ত নিম্নমানের। নবনির্মিত দেয়ালে ইতোমধ্যে ফাটল, পলেস্তারা ফুলে ওঠা ও খসে পড়া এবং ভিআইপি লাউঞ্জের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে। এ ছাড়া ২০২১ সালের মে মাসে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে লাইটের মোটর ঢেকে রাখার জন্য ৯৫টি স্লাব তৈরি করা হয়, এতে পরিত্যক্ত রড, সিমেন্ট, বালু ব্যবহার করা হয়েছে।

সুপ্লব কুমার প্রতিনিয়ত নিয়মবহির্ভূত সরকারি মালামাল বিক্রি করে সেই টাকা হাতিয়ে নেন। তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করা মোমিন মোকছেদুলের মাধ্যমে বিমানবন্দরের ঠিকাদারি কাজ থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে টাকা আদায় করে থাকেন। বিমানবন্দরে কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী শিপনের থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত উপদেষ্টার মাধ্যমে বিমানবন্দরসংলগ্ন ওয়েলফেয়ার মার্কেটের ৩৯টি দোকান থেকে দোকানপ্রতি তিনি ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। 

তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে একজনকে বিমানবন্দরে লিফটম্যান হিসেবে চাকরি দেওয়া, কর্মরত-কর্মচারীদের ওভারটাইম কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কর্মচারীরা আগে মাসে ১৭০ ঘণ্টার ওভারটাইম পেলেও বর্তমানে তাদের ১২০ ঘণ্টা ওভারটাইম দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম তাকে এই কাজে সহযোগিতা করে বলে একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। সুপ্লব বিমানবন্দরে বিভিন্ন কাজ করার নাম করে বিল ইস্যু করে টাকা নিয়ে থাকেন। পানির ফিল্টারের কোম্পানির কাছ থেকে ডোনেশন নিয়ে বিমানবন্দরে ফিল্টার স্থাপন করা হলেও সুপ্লব সেই ফিল্টার বাবদ বিল করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

ব্যবস্থাপকের অনুকূলে সরকারিভাবে ‘জে’ টাইপ কোয়ার্টারে বাসা বরাদ্দ থাকলেও সুপ্লব সেখানে বসবাস না করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির রেস্ট হাউসে প্রায় এক বছর ধরে অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, আকাশ পথে নিরাপদে বিমান চলাচলের জন্য সিভিওআরের পরিবর্তে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির ডিভিওআর ব্যবহৃত হচ্ছে। এ জন্য পূর্বে ব্যবহৃত সিভিওআর ভাঙার দরপত্র পেয়েছে আরঅ্যান্ডআর কোম্পানি। সুপ্লব কুমার ঘোষ ইতঃপূর্বে ব্যবহৃত সিভিওআর বেবিচককে ফেরত না দিয়ে পরিত্যক্ত মূল্যবান সামগ্রী নিজের অধীনে রেখে আত্মসাতের চেষ্টা করছেন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল সাইডে একটি অস্থায়ী টিনশেড ঘর নামাজ ও অজুখানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ড্রাইভার ও পরিদর্শনে আসা সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা সেখানে নামাজ আদায় করতেন। সুপ্লব কুমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামাজের ঘরের টিনের চাল খুলে রেখে স্থানটিকে খালি করে রেখেছেন এবং সেখানে কোনো লোকজন প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। 

এদিকে বিমানবন্দর একটি কেপিআই স্থাপনা হওয়ায় এর অভ্যন্তরে আগে কোনো রাজনৈতিক সংবাদ সম্মেলন বা সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হতো না। সম্প্রতি সুপ্লব কুমারের অনুমতিক্রমে ভিভিআইপি লাউঞ্জে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতাদের সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। তিনি ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব ধরে রাখার জন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং মন্ত্রী, এমপি ও রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদ করে থাকেন। এ ছাড়া তার অফিস কক্ষে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আপ্যায়নসহ আলোচনা সভা হয়। তিনি উত্তরাঞ্চলের কয়েকজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করে চলছেন। 

জানা গেছে, তিনি ২০২২ সালে রানওয়েতে ড্রাইভিং শেখার সময় নভোএয়ারের একটি উড়োজাহাজ অবতরণকালীন বিধ্বস্ত হতে গিয়েও পাইলটের দক্ষতায় অন্তত ৭০ যাত্রী প্রাণে বেঁচে যান। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত শেষে তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দরেই বহাল তবিয়তে থেকে যান।

২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সুপ্লব কুমার ঘোষকে বেবিচক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বদলির আদেশ দেয়। কিন্তু বিভিন্ন মহলের জোর সুপারিশে তিনি এখনও সৈয়দপুর বিমানবন্দরেই আছেন। অভিযোগ রয়েছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ২৪০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজের দরপত্র প্রকাশের পর ভাগবাটোয়ারা ও কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের টাকা উৎকোচ দিয়ে তিনি সপদে বহাল রয়েছেন। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে সুপ্লব কুমার বলেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা বলেছেন, এগুলো পুরোনো। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। গাড়ি পার্কিং থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয়। দোকান বরাদ্দ যেগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো দিয়েছেন আগের ম্যানেজার। ওই সময়কার বরাদ্দটি যথাযথ প্রক্রিয়া না হওয়ায় আমি বেবিচক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করি। বেবিচক দোকানগুলোর পানি ও বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দিতে বলেছে। দোকানগুলো ভাঙার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। রানওয়েতে ড্রাইভিং শেখার অভিযোগও ঠিক নয়। আমার সময়ে দেশের সব বিমানবন্দরের মধ্যে সৈয়দপুর সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম অবস্থানে আছে। আমার আগের ম্যানেজার ও কয়েকজন ঠিকাদার আমার বিরুদ্ধে নানান অপ্রচার চালাচ্ছেন। এর আগেও একাধিক পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসবে বিচলিত নই।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা