ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট
কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪৯ পিএম
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০৬ পিএম
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান। ছবি : সংগৃহীত
কক্সবাজারের কলাতলীর একটি খাবারের হোটেল থেকে তিন লাখ টাকার খাবার খেয়ে বকেয়া পরিশোধ না করার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত জমা পড়েছে। অভিযোগকারী হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা লিখিত জমা দিয়েছেন ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার। পুলিশ বলছে, তারা দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখছেন। প্রকৃত দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার সদরের কলাতলী ডলফিন মোড়ের হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট। এর মালিকানা নিয়ে হাজি দেলোয়ার ও মেজর (অব.) দেলোয়ার নামে দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে টানা ৫ বছর ধরে একের পর এক সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে। খাবারের ওই হোটেলটি এই রিসোর্টের নিচতলার একটি কক্ষে অবস্থিত। এর পরিচালনার দায়িত্বে আছেন শাহাব উদ্দিন। আর রিসোর্টের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার হলেন মো. আদনান।
শাহাব উদ্দিন কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের ওয়াদ আলীর ছেলে। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, কলাতলী ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের নিচে ‘ভাতের হোটেল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তিনি পরিচালনা করছেন কয়েক বছর ধরে। গত ৭-৮ মাস ধরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার প্রতিষ্ঠানে এসে ভাত খেয়ে চলে যায়। অনেকটা জোর করে ভাত খেয়ে টাকা না দিয়ে বকেয়া হিসেবে খাতায় লিখে রাখার কথা বলে তারা। এর মধ্যে তিন লাখ টাকা বকেয়া হয়েছে। টাকা দাবি করলে উল্টো তাকে নানাভাবে হুমকিধমকি দিয়ে আসছে। বকেয়া দাবি করায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলায় তার বাবা ওয়াদ আলী গুরুতর আহত হন। এ সময় হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ থেকে ৩০ হাজার টাকা লুটও করে।
এজাহারে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান ছাড়াও ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা আসাদুজ্জামান সায়েম, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার মো. আদনান, ওয়াশিক আহামেদ, মো. মুন্না, শফিউল আলম লাকী ও সাইমন।
রিসোর্টের ফ্রন্টডেস্ক ম্যানেজার মো. আদনান তার এজাহারে শুধু শাহাব উদ্দিনকে অভিযুক্ত করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, শাহাব উদ্দিন ২০১৮ সালে মাসিক ১৮ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে নিচতলার একটি কক্ষে স্টাফ মেস হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু গত ৬ মাস ধরে ভাড়া দিচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি একটি পক্ষ দখল করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে। শাহাব উদ্দিন ওই চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকা না দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগ নেতার ভাত খাওয়া না-খাওয়া নিয়ে তার এজাহারের কোনো সম্পর্ক নেই।
অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান কলাতলীতে গিয়ে শাহাব উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানে ভাত খাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোনো দিন এ ধরনের হোটেলে যাইনি। ভাতও খাইনি। প্রমাণ দিতে পারলে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
অভিযোগকারী শাহাব উদ্দিন জানান, বকেয়া পরিশোধ না করার সব প্রমাণ তার হাতে রয়েছে। এখন উল্টো তাকে ফাঁসানোর জন্য এজাহারটি করা হয়েছে। তিনি মেজর দেলোয়ারের কাছ থেকে কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন। ভাড়ার টাকা ঠিকভাবে পরিশোধ করে আসছেন।
কক্সবাজারের কলাতলী ডলফিন মোড়ে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি প্রায় ৫০ কাঠা জমির ওপর অবস্থিত। হোটেলটিতে কক্ষের সংখ্যা ৩৭৪টি। আর মালিক আছেন আড়াইশর বেশি। হোটেলটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। আর নির্মাণের দায়িত্বে ছিল আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০১২ সালে হোটেলটি তৈরি করে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও অধিকাংশ মালিক এখনও হোটেলটির নিজের অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে পাননি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, ভাত খেয়ে টাকা না দেওয়া, উল্টো মারধরের ঘটনাটি সত্য হলে এটা অপরাধ। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। অপর যে এজাহারটি জমা দেওয়া হয়েছে- এটাও তদন্ত চলছে। আইনগত ভিত্তি থাকলে তা অবশ্যই আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটির মালিকানা নিয়ে বিরোধের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে জানান, প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক কে তা আদালত নির্ধারণ করবেন। এখানে পুলিশের কোনো কাজ নেই। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে। ফৌজদারি অপরাধ হলে ব্যবস্থা নেবে। আদালতের নির্দেশ পেলেই পুলিশ হয়তো ওই ব্যাপারে নির্দেশনা পালন করতে পারে।