× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ধানক্ষেতে পোকা দমনে ‘আলোর ফাঁদ’

নেত্রকোণা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৪২ পিএম

কেন্দুয়ায় ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ‘আলোর ফাঁদ’ পেতে ক্ষতিকর পোকা নির্ণয় ও দমন করা হচ্ছে। প্রবা ফটো

কেন্দুয়ায় ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ‘আলোর ফাঁদ’ পেতে ক্ষতিকর পোকা নির্ণয় ও দমন করা হচ্ছে। প্রবা ফটো

নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় ধানক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ‘আলোর ফাঁদ’ পেতে ক্ষতিকর পোকা নির্ণয় ও দমন করা হচ্ছে। ধানক্ষেতের সুরক্ষায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এ প্রযুক্তির ব্যবহার। আলোর ফাঁদ মূলত ফসলে পোকার উপস্থিতি যাচাই করে। এটি ক্ষেতের পাশে নিয়মিত পেতে রাখলে অনেক পোকা আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। এটি পোকা নিয়ন্ত্রণে একটি যান্ত্রিক পদ্ধতিবিশেষ। আলোর ফাঁদ এ দেশে বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে কৃষকরা সাধারণত সহজ মাধ্যম হিসেবে কীটনাশক ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কীটনাশক ব্যবহার না করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে একযোগে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করলে ফসল উৎপাদনও বাড়বে।

চলতি রোপা আমন মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড়ের কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে কেন্দুয়ায় আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা বেশ উপকৃত হচ্ছেন। ফলে আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি দিন দিনই কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিসের বরাতে জানা গেছে, একটি পৌরসভা ও তেরোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কেন্দুয়া উপজেলা। এ উপজেলায় ৪০টি ব্লক রয়েছে। এসব ব্লকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি রোপা আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ২০ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ধান রয়েছে। 

এ বছর আমন ধানের জমিতে তেমন কোনো রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। 

আমন ধানের জমিগুলো এরই মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠছে। এখন চলছে ধানের গোছায় গোছায় থোড় ধারণের সময়। এমন সময় ধানের জমিতে বিভিন্ন বন্ধু পোকা ও ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আগমন ঘটে। তাই কোনটি বন্ধু পোকা ও কোনটি ক্ষতিকর পোকা তা চিহ্নিত করতে এবং ক্ষতিকর পোকা দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আলোর ফাঁদ অত্যন্ত উপকারী একটি পদ্ধতি। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৪০টি ব্লকেই আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিতকরণসহ তা দমনে কাজ চলছে। সপ্তাহের প্রতি বুধবার স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এবং এতে উপস্থিত হচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা নিজেও। এ রোপা আমন মৌসুমে প্রতিটি ব্লকে কমপক্ষে দশবার আলোর ফাঁদ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। 

তবে ধানের থোড় ধারণের মুহূর্তে উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ধানের জমিতে ইঁদুর ও ক্ষতিকর কিছু পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

কেন্দুয়া পৌর শহর বাদে আঠার বাড়ি (তুরুকপাড়া) গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘এ বছর সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবং সারের কোনো ঘাটতি না থাকায় আমার ধানের জমিগুলোতে বেশ ভালো ফলনের আশা করছি। কিন্তু ধানের থোড় নেওয়ার মুহূর্তে জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে আমাদের কাঁচা ধানগাছ কেটে ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইঁদুর। তবে আমরা কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ইঁদুর দমনে চেষ্টা করছি। এ ছাড়া কিছু ক্ষতিকর পোকাও আক্রমণ করছে ধানক্ষেতে। যে কারণে কিছু ধানের জমিতে ধানগাছের পাতা মুড়িয়ে যাচ্ছে। পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে এবং ধানগাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। ইঁদুর ও পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারলে ধানের ফলন ভালো হবে বলেও তিনি প্রত্যাশা করেন।’

উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণজাত ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আলোর ফাঁদ প্রযুক্তিটি কৃষকদের জন্য খুবই উপকারী একটি পদ্ধতি। আমি আমার ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বুধবার এলাকার কৃষকদের নিয়ে আলোর ফাঁদ ব্যবহার করি। ইচ্ছে করলে এ পদ্ধতিটি যেকোনো কৃষক ব্যক্তি উদ্যোগেও ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ফসলি জমির আশপাশে দুটি খুঁটি আড়াআড়িভাবে কাঁচির মতো করে দাঁড় করিয়ে মধ্যে একটি বাল্ব বা বাতি ঝুলিয়ে দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করতে হয় এবং বাতির নিচে পানিভর্তি একটি পাত্র রাখতে হয়। তারপর বাতির আলোর আকর্ষণে জমিতে থাকা পোকারা ছুটে আসে এবং পাত্রে রাখা পানিতে পড়ে মারা যায়। এতে ক্ষতিকর পোকা ও বন্ধু পোকার সংখ্যা চিহ্নিত করা যায় এবং ক্ষতিকর পোকা থাকলে তা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ক্ষতিকর পোকা না থাকলে আলোর ফাঁদ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা বলেন, ‘কেন্দুয়াতে প্রতিটি ব্লকেই প্রতি বুধবার আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ খুব একটা নেই। মাজরা পোকা কিছু ছিল। বৃষ্টি হওয়ার কারণে এবং প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগের ফলে তা আর নাই বললেই চলে। তবে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ রয়েছে। তা দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় ও পরিমিত কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য কৃষকদের ধানের জমিতে বিলি করে দিতে, জমিতে কলাগাছের খোসা দিতে এবং ইঁদুরের গর্তের মুখে কীটনাশক ও গ্যালের ট্যাবলেট দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আমরা ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ইঁদুর দমন করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা