গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫৫ পিএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩০ পিএম
নিষেধাজ্ঞার সময় কীভাবে সংসার চলবে- তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ এসব জেলের কপালে। প্রবা ফটো
সারা বছরের খরা কাটিয়ে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে অল্পস্বল্প ইলিশের দেখা মেলার পরপরই ফের শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এদিকে ইলিশ আহরণের মৌসুম প্রায় শেষ দিকে। কিন্তু ভরা মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও নদীতে ইলিশের নাগাল না পেয়ে হতাশ এ উপজেলার কয়েক হাজার জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময় কীভাবে সংসার চলবে- তা নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ এসব জেলের কপালে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার মধ্যরাত থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। গোয়ালন্দ উপজেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১ হাজার ৮২৮ জন এবং কার্ডধারী রয়েছেন ১ হাজার ৬২৭ জন। ইলিশ শিকারে এই নিষেধাজ্ঞায় গোয়ালন্দ উপজেলায় ১ হাজার ৮২৮ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ২২ দিনে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অপ্রতুল খাদ্য সহাযতা নিয়েও রয়েছে জেলেদের ক্ষোভ। এজন্য নগদ অর্থ দেওয়ার দাবি তাদের। এ ছাড়াও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বৈরী আবহাওয়া ও পদ্মা নদীতে ইলিশের অভাব থাকায় জেলেরা হতাশায় পড়েছেন।
স্থানীয় একাধিক জেলে জানান, আগামী ২২ দিন ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার থেকে তারা বিরত থাকবেন। কিন্তু বিকল্প কোনও কর্মসংস্থান না থাকায় তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হবে। এ ছাড়াও মহাজনের দেনা আর এনজিওর ঋণের কিস্তি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
তারা বলছেন, সরকারের দেওয়া ২৫ কেজি চালে পরিবার পরিজন নিয়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের কিছুই হয় না।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ইলিশের আড়তে গিয়ে কথা হয় জেলে, পাইকার, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে। সবার কণ্ঠেই হতাশা ও ক্ষোভ।
৫০ বছর ধরে পদ্মা ও যমুনায় ইলিশ ধরেন দৌলতদিয়া পদ্মাপারের বাসিন্দা নেকবার আলি। প্রবীণ এই জেলে বলেন, ‘এই বচ্ছর পদ্মায় তেমন কোনো ইলিশ পাই নাই, যা পাইছি তা জাটকা। এই জাটকা শিকার কইরা কোনোরহম জীবনডা বাঁচাইছি। এইবার (নিষেধাজ্ঞার মধ্যে) যে পোলা মাইয়া লইয়া কী খামু, আল্লায় জানে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলে বলেন, ‘আজ ৪০ বছর ধরে পদ্মায় মাছ ধরি। কোনো দিন এক কেজি চাউলও পাইনি। অনেকেই জেলে না হয়ে তারা নিয়মিত চাউল পায়, অথচ যারা প্রকৃত জেলে যারা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবার অনেক রাজনৈতিক নেতাদের লোকও চাউল পাচ্ছে। কী আর বলব, আমরা গরিব মানুষ বেশি কিছু কইলে আবার জেলে যেতে হবে।’
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফকিরডাঙ্গা এলাকার জেলে নুরু হালদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় তো আমরা জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারব না। তাই আমাদের তো কোনো আয় ইনকামও থাকে না। এ বছর সরকার যদি আমাদের নামে বরাদ্দকৃত চাল দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে অনেক উপকার হবে।’
গোয়ালন্দ উপজেলার মৎস্য অফিসের দায়িত্বে থাকা রাজবাড়ী সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব জানান, ২২ দিনের মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাকে সফল করতে এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের নামে বরাদ্দ দেওয়া সরকারি চাল দ্রুত বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার জন্য সল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যারা সরকারি আইন অমান্য করে নদীতে গিয়ে মাছ শিকার করবে তাদের জেল ও জরিমানা করা হবে।’
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেএম সিরাজুল কবির বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কোনো জেলে পদ্মা নদীতে নামতে পারবে না। পুরো পদ্মা নদী জেলেশূন্য থাকবে। কোনো বরফ কারখানায় মাছ মজুদ করা যাবে না। কোনো যানবাহনে মাছ পরিবহন করা যাবে না। আমরা পদ্মা নদীতে সর্বক্ষণ নজরদারি করব।’
যারা আইন অমান্য করবে তাদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।