রফিকুল ইসলাম সান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২২ পিএম
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:০৫ পিএম
সাঁথিয়ার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের ঘুঘুদহ গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পানিতে ডুবে আছে। প্রবা ফটো
বর্ষা এলেই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের ঘুঘুদহ গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় এখানে বসবাসরত পরিবারগুলোকে। দুর্ভোগের শিকার বেশিরভাগ পরিবার উপহারের এসব ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অন্যরাও চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ঘুঘুদহ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়। পরে ১৫ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে এসব ঘর হস্তান্তর করা হয়। নিচু জমিতে মাটি ভরাট না করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তাই বৃষ্টি ও বন্যার পানি জমে যায়। সাপ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় ১০ পরিবার আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। উপায় না থাকায় অপর পাঁচ পরিবার চরম দুর্ভোগ নিয়ে সেখানেই বসবাস করছে।
প্রকল্পের বাসিন্দা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নিচু জমিতে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ঘরগুলো ডুবে যায়। তিন সপ্তাহ ধরে ঘরগুলো পানিতে ডুবে আছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরের মেঝেতে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পানি। এমন অবস্থায় ঘরের মধ্যে চৌকি অথবা মাচা বানিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। নলকূপ পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। শৌচাগার পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বাসিন্দারা। এ ছাড়া রান্নাঘরের চুলায় পনি ওঠায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছে, শিশু ও বৃদ্ধরা চলাচল করতে গিয়ে পানিতে পড়ে আহত হয়েছে। অনেকেই তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া চলাচলের জন্য প্রকল্পের নিজস্ব কোনো রাস্তা না থাকায় তাদের যেতে হয় অন্যের জমির ওপর দিয়ে। সেখানেও বাধাগ্রস্ত হয় তারা। অন্য কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় চরম দুর্ভোগ স্বীকার করেও তাদের এখানে থাকতে হচ্ছে। ব্যবস্থা হলে যেকেনো সময় চলে যাবে তারা।
প্রকল্পের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ঘরের ভেতর হাঁটুপানি, ঘরের বাইরে অনেক পানি। আমার আড়াই বছরের ছেলে দুবার পানিতে পড়ে গিয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে। যাওয়ার জায়গা থাকলে চলে যেতাম। এখানে বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।’
অপর বাসিন্দা দুলালী খাতুন বলেন, ‘সরকার আমাগরে (আমাদের) ঘর ও জমি দিছে খুব খুশি অইছি। কিন্ত বন্যার পানি ঘরের মদ্দি ঢুকে পড়ায় গ্যাদা ছাওয়ালপাল (ছোট ছেলেমেয়ে) নিয়্যে চলাচল করাত কষ্ট অয়। কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই, তাই বাধ্য অয়া হেনেই খুব কষ্ট করে থাহি। ঠিকমতো রান্না করব্যের পারত্যেছিনা। অন্যের বাড়ি থেইক্যে খাবার এনে ছাওয়ালপালরে খাওয়াই।’
দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘পানির কারণে মেয়েটা স্কুলে যেতে পারে না। ছাওয়ালপাল নিয়্যে সব সময় আতঙ্কে থাকি। সাপ, পোকামাকড় দেইখ্যে ডড় (ভয়) করে। পানির মদ্দি থাকতি থাকতি হাত-পায়ে ঘা ও চুলকানি অয়া গেছে। বর্ষার সময় আমাগরে খুব কষ্ট অয়। সরকার যদি ঘরগুলো উঁচু করে দেয়, তাহলে অনেক উপকার হবে।’
আবুল কাশেম খলিফা নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের আগে নিচু জায়গাটি যদি বালি বা মাটি দিয়ে ভরাট করে উঁচু করা হতো, তাহলে বন্যার পানিতে এভাবে তলিয়ে যেত না। আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। ঘর ছেড়েও কেউ চলে যেত না।’
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লতিফা খাতুন বলে, ‘পানির ভেতর থাকতে থাকতে হাত-পায়ে ঘা হয়েছে। স্যাভলন ও ফিটকিরি মাখি তবুও জ্বালাপোড়া করে। এত দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যাব কোথায়? যাওয়ার তো আর জায়গা নেই আমাদের।’
জানতে চাইলে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঘরগুলো উঁচু করার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দের সুযোগ আছে কি না, তা দেখা হবে। ইতোমধ্যেই উপকারভোগী অসহায় পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। ঘরগুলো উঁচু করা, সীমানাপ্রাচীর দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেওয়া এবং চলাচলের রাস্তা করে দেওয়ার জন্য সার্ভেয়ার দিয়ে জায়গা ও পানির গভীরতা জরিপ করা হয়েছে।’