× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্প

জমি দিয়ে চক্রের হাতে জিম্মি মালিকরা

সুজিত কুমার সরকার, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১১:০৭ এএম

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে চলছে ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কাজ। প্রবা ফটো

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে চলছে ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কাজ। প্রবা ফটো

যোগাযোগব্যবস্থায় আধুনিকায়নে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে নির্মাণ করা হচ্ছে ইন্টারচেঞ্জ। এ জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সংযোগ প্রকল্প-২-এর আওতায় প্রায় ১৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকরা ন্যায্যমূল্য পেতে নানাভাবে হয়রানি হচ্ছেন বলে অভিযোগ। জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। আর এই চক্রের হাতে জিম্মি জমির মালিকরা। বিষয়টি প্রশাসন জানলেও চক্রের সদস্যরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জমির মালিকদের। তদন্ত করে চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের। 

সিরাজগঞ্জ সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার যানবাহন চলাচলের প্রবেশপথ হাটিকুমরুল গোলচত্বর। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নতুন পরিকল্পনায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নে ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। কোলাহলযুক্ত এলাকা ক্রমেই নীরব হয়ে পড়ছে। সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২-এর আওতায় কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণে চেক পাননি সিংহভাগ জমি ও ভবনের মালিকরা। 

জমির মালিক ও স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে জাল দলিল তৈরির একটি চক্র। জমির মূল মালিক যখন জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা থেকে নোটিস হাতে পান, ঠিক তখনই ভুয়া বা জাল দলিল অথবা ভুয়া ওয়ারিশ সনদ দিয়ে অভিযোগ করেন চক্রের সদস্যরা। এরপর আটকে যায় মূল মালিকের পাওনা চেক। তখন থেকেই দিনের পর দিন ঘুরতে হয় এলএ শাখায়। 

একপর্যায়ে এই চক্রের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে হয়। পাওনা টাকার একটি অংশ দিতে হয় তাদের। না দিলে অভিযোগের পর অভিযোগ দাখিল করেন তারা। পরে শুনানিতে ঘুরতে হয় মূল মালিকদের। চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করেছে না। ইন্টারচেঞ্জের কাজ চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে ফসল উৎপাদন। অন্যদিকে ক্ষতিপূরণের চেক পাচ্ছেন না প্রকৃত জমির মালিকরা। এতে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। 

জমির একজন মালিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নুরুল হুদা বলেন, ‘আমার ৭৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এলএ শাখা থেকে নোটিস পাওয়ার পর টাকা উত্তোলনের জন্য গেলে জানতে পারি চক্রের সদস্য ফেরদৌস জামান জর্জ মালিকানা দাবি করে অভিযোগ করেছেন। কাগজ যাচাই-বাছাইয়ের পর আমার পক্ষেই রায় আসে। প্রথম কিস্তির টাকাও পেয়েছি। এরপর আবার অভিযোগ দিয়েছেন তারা। এখন মাসের পর মাস ধরে চলছে শুনানি। চক্রের সদস্যরা প্রতিনিয়ত প্রস্তাব দিচ্ছেন মীমাংসার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘চক্রকে ভুয়া কাগজ তৈরি করে দেন হাটিকুমরুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী। মূলত তিনিই চক্রের মূলহোতা। আমি বৃদ্ধ মানুষ ডিসি অফিসের এলএ শাখায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত। আমি এসবের সুষ্ঠু তদন্ত চাই, বিচার চাই।’

সাইদুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, ‘আমার ক্রয়কৃত ৭১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে। নোটিস পাওয়ার পর এলএ শাখায় গেলে জানতে পারি জমির নাকি ওয়ারিশ আছে। এরপর কিছু পাবনার ও তাড়াশের জাল দলিল দাখিল করেছে একটি চক্র। বছরখানেক ধরে জমির টাকার জন্য প্রতিনিয়ত ঘুরতে হচ্ছে। এখন চক্রের প্রধান প্রফেসর আনিসুর রহমান প্রস্তাব দিয়েছেন মীমাংসার জন্য।’ নুরুল হুদা, সাইদুর রহমানের মতো আলম হোসেন, নেজাব আলী, তোফাজ্জল হোসেনসহ শতাধিক জমির মালিকরা এমন সমস্যায় আছেন বলে জানান। তারা এই চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হাসান আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ দেওয়ার পর উল্লাপাড়া থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। আমি সরকারি চাকরি করি, কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত না।’

অভিযোগ অস্বীকার করে ফেরদৌস জামান জর্জ বলেন, ‘আমার কোনো জমির কাগজপত্র নকল নয়। আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ আরেক অভিযুক্ত আনিসুর রহমান বলেন, ‘নিজের জমি নিয়ে মামলায় লড়ছি। কোনো জাল-জালিয়াতের মধ্যে নেই। তা ছাড়া আমি শিক্ষকতা করি, কখনও কোনো চক্রের সঙ্গে জড়িত নই। তবে এলাকায় দরবার সালিশের জন্য দুয়েকটা কাজ করতে হয়।’

উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাদিজা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখি। আমাদের কাছে একই জমির দুরকম দলিল আছে, দুরকম লেখা। যাচাই-বাছাই করেই রায় দিই। কিছু দলিল আছে যা যাচাই-বাছাই করার জন্য পাবনা পাঠাতে হয়। সেখানে নানা জটিলতা দেখা দেয়। যার কারণে সাধারণ জমির মালিকদের ঘুরতে হয় অনেক দিন। তবে চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ অনেক হয়রানি করছে তারা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘ভূমি অপরাধ নামে নতুন একটি আইন হয়েছে। আইনের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আমাদের ভূমি অফিসের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, ‘জমির চেক হস্তান্তরের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়। কোনো অভিযোগ এলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হয়। সেক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা