পাবনা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১০ পিএম
পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মিরাজুলের বাবা দুলাল হোসেন এবং মা রিতা খাতুন। প্রবা ফটো
অচল সংসারকে সচল করতে একমাত্র ছেলে মিরাজুল মণ্ডলকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু সংসারের চাকা সচল তো দূরের কথা ছেলেকে হারিয়ে আরও নিঃস্ব বাবা-মা। মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই খোঁজ মিলছে না নাড়িছেঁড়া ধনের। প্রায় চার বছর ধরে ছেলের খোঁজে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রশাসনসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বাবা-মা।
রবিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন মিরাজুলের বাবা দুলাল হোসেন এবং মা রিতা খাতুন।
দুলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৮ সালের মার্চে ঢাকার মেসার্স ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয় ছেলে মিরাজুল মণ্ডলকে (৩২)। যাওয়ার প্রায় দেড় বছর ভালোই চলছিল। এরপর থেকে ছেলে মিরাজুল তার রুমমেট মিলন, ফরহাদ এবং এজেন্ট রুহুল আমিন স্বপনের সঙ্গে বিরোধের কথা জানায়। তারা বিভিন্ন সময় আমার ছেলেকে হুমকি দিত, টাকা-পয়সা জোর করে কেড়ে নিত। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে আমার ছেলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে আমি এজেন্ট স্বপন এবং স্থানীয় দালাল মজনু বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমার ছেলের সন্ধান দেওয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা নিয়েছে কিন্তু আমার ছেলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘পরবর্তী সময়ে এজেন্ট স্বপন এবং স্থানীয় দালাল আমাকে সমঝোতার অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু আমি আমার ছেলেকে মৃত অথবা জীবিত পাওয়ার দাবি জানাই। এরপর থেকে তারা আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিই। এরপরও আমি কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা গরিব ও অসহায় পরিবার। ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে এবং স্ত্রীর ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে জমিজমা বিক্রি করে পথে বসে গেছি। এরপর ছেলের সন্ধান পেতে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’
মা রিতা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের সন্ধান চাই জীবিত অথবা মৃত অবস্থায়। মৃত্যু হলেও অন্তত তার লাশ ও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই। আমরা গরিব মানুষ, কোথায় গেলে আমার সন্তানের খোঁজ পাব? কেউ আমাদের সঠিকভাবে সাহায্য করছে না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এজেন্ট রুহুল আমিন স্বপন দালাল মজনু বিশ্বাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।