× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মা-বাবা থাকা শিশুরাও কাগজে-কলমে এতিম

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম

বেতাগী সমাজসেবা কার্যালয়। প্রবা ফটো

বেতাগী সমাজসেবা কার্যালয়। প্রবা ফটো

দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে এতিমখানা ও শিশুসদনে ভুয়া এতিম ছাত্র দেখিয়ে সরকারিভাবে বরাদ্দের টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। কাগজে-কলমে এতিম দেখানো ওইসব ছাত্রের বেশিরভাগেরই পিতা-মাতা রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে এতিমখানার পরিচালকরা বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গেছে। 

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেতাগী উপজেলায় বরাদ্দের জন্য সরকারের মোট ১৭টি এতিমখানা রয়েছে। যার মধ্যে বরাদ্দের আওতায় ৩১৫ জনকে এতিম দেখানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এতিমখানার ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সি এতিম অর্থাৎ পিতৃহীন বা পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র শিশুর ৫০ শতাংশ বরাদ্দের আওতায় আসবে। অর্থাৎ একটি এতিমখানায় যদি ১০০ এতিম দরিদ্র শিক্ষার্থী থাকে, তবে ৫০ জনের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হবে। একজন এতিমকে মাসে ২ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে খাবার বাবদ দেওয়া হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোশাকের জন্য ২০০ টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১২ হাজার করে ৬ মাস পরপর বছরে দুবারে মোট ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।

বেতাগী উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ৩১৫ জন এতিমের জন্য ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। প্রথম কিস্তিতে ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা ১৭টি এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে।

গত দুই সপ্তাহের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বকুলতলী গ্রামের কারিমিয়া এতিমখানায় কাগজে-কলমে ৩৪ জন এতিম দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে কয়েকজন অনাবাসিক শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। তাদের ভেতর এতিম ছিল মাত্র একজন। এতিমখানা ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা হেমাতুল্লাহ বলেন, আমাদের এই মাদ্রাসায় চার-পাঁচ জন এতিম আছে। বাকিরা গরিব শিক্ষার্থী। তারা এখানে ফ্রি খাবার খায়।

এতিমখানার পরিচালক মো. হাবিবুর রহমানের কাছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এতিমদের তালিকা দেখাতে বললে তিনি তা দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, এতিম ও দুস্থ অনেক শিক্ষার্থী এখানে আছে। গরিব অসহায় ছাড়া অন্য মানুষ এখানে পড়ে না। আপনারা আমাদের বিপদে ফালাইয়েন না।

মোকামিয়া ইউনিয়নের জোয়ার করুনা মুসলিম এতিমখানাটিও সরকারি তালিকাভুক্ত। কাগজে-কলমে এখানে ১৮ জনের অনুকূলে মাসে ৩৬ হাজার আর বছরে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরেজমিন কোনো এতিম দেখা যায়নি। এমনকি মাদ্রাসার পরিচালক আব্দুল লতিফ জানেন না এখানে কতজন এতিম রয়েছে। এতিমদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতিম ছাত্ররা সব ছুটিতে বাড়িতে গেছে। আপনারা সবই বুঝেন, কোনো প্রতিষ্ঠানেই সব এতিম থাকে না। এতিমদের জন্য বরাদ্দের টাকা দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকদের এবং বাবুর্চির বেতন দিতে হয়।

একই চিত্র উপজেলার করুনা মোকামিয়া হাছানিয়া শিশু সদনের। এই শিশু সদনে ২০ জন এতিম ছাত্রের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সেখানে করুনা মোকামিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্রদের থাকার হোস্টেলটিকে এতিমখানা ও ছাত্রদের এতিম দেখিয়ে বরাদ্দ লোপাট করা হয়।

করুনা মোকামিয়া কামিল মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী মো. ফেরদৌস বলেন, আমরা ১১ জন এই হোস্টেলে থাকি। তবে এর ভেতরে মা-বাবা ছাড়া একজন রয়েছে। এতিমের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দেশেই তো এখন এতিম নেই। মাদ্রাসায় যারা আছে, তারা অসহায় ও দুস্থ। আমরা প্রত্যয়ন দিয়ে এদের পড়াই।

একইভাবে সরেজমিন উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের হাজী ফখরুদ্দিন ও নেছার উদ্দিন শিশু সনদে বরাদ্দ পাওয়া ১৮ জন এতিমের ভেতরে ৪ জন, বিবিচিনি ইউনিয়নের পূর্ব রানীপুর শাহ আলম মোল্লা এতিমখানায় ১১ জনের মধ্যে ৩ জন এতিম পাওয়া যায়। সদর ইউনিয়নের রানীপুর এতিমখানা শিশু সদনে ৮ জনের বিপরীতে কোনো এতিমই পাওয়া যায়নি। একই রকমের চিত্র উপজেলার বাকি এতিমখানা ও শিশু সদনের। 

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, এতিম না থাকায় আমরা কয়েকটি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের বরাদ্দ বাতিল করেছি। বর্তমান তালিকাভুক্ত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত এতিমখানাগুলোতে প্রকৃত এতিমের সংখ্যার ক্ষেত্রে যদি কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকে, তবে তদন্তসাপেক্ষে সেসব এতিমখানার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, যেসব এতিমখানায় এতিম নেই, তাদের সকল সাহায্য বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা