ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৪৬ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১১:০৪ এএম
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ৫ গুণ রোগী ভর্তি। শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বুধবারের ছবি
ফেনীতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত কয়েকদিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ৫ গুণ অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এতে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল জানান, গতকাল বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ১৩৫ জন। শিশুদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর-সর্দিসহ নানান রোগে আক্রান্ত। এখন আবার নতুন করে হ্যান্ড ফুড অ্যান্ড মাউথ নামে নতুন আরেকটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
তিনি আরও জানান, রোগীর তুলনায় শিশু চিকিৎসক অপ্রতুল। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে এত রোগীর চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের স্ক্যান বিভাগও চালু রয়েছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে।
সরেজমিনে হাসপাতালের শিশু বিভাগে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ভেতর জায়গা না হওয়ায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝে ঠাঁই নিয়েছেন অভিভাবকরা। ওয়ার্ডের ভেতর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সেবা নিতে রোগীর স্বজনরা শিশুদের কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা জানান, হাসপাতালে বারান্দায় কোনো রকম বিছানা পেতে থাকলেও সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না।
শামীমা আক্তার নামে এক শিশু রোগীর অভিভাবক বলেন, ‘ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে শিশু রোগীদের। ফলে সুস্থ হওয়ার বদলে আরও বেশি সংক্রমিত হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসা করাতে এসে চরম বিপাকে পড়েছি আমরা।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। ওয়ার্ডের ভেতর এত রোগী ডাক্তার আছেন এক বা দুইজন। কম সময়ে ডাক্তাররা রোগীর সমস্যা ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। এ ছাড়া ওয়ার্ডে তিন-চারজন নার্স ডিউটি করেন, রোগীর চাপ বাড়লে তাদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না । প্রায়ই তারা অশোভন আচরণ করেন।
হাসপাতালের শিশু বিভাগে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স শ্যামলী রাণী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। রোগীর চাপ সামাল দেওয়া আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
চিকিৎসক সংকটের কথা উল্লেখ করে আরএমও আসিফ ইকবাল বলেন, ‘২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করার মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায়ই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে যে পরিমাণ শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে সে তুলনায় চিকিৎসক নেই। মাত্র তিনজন চিকিৎসককে অধিক চাপ সামলে সেবা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে রোগী এলে ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসক না থাকলে সেবা দেওয়াটা কষ্টসাধ্য। লোকবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলেও সুফল মিলছে না।’