সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩৫ পিএম
নতুন করে চালু হাসন রাজা মিউজিয়াম। প্রবা ফটো
সুনামগঞ্জে মরমি সাধক রাধারমণ দত্ত, বাউল শাহ আবদুল করিম এবং জ্ঞানের সাগর দুর্বিন শাহের নামে আলাদা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাম কাগজপত্রে কোথাও কোথাও ‘হাছন রাজা শিল্পকলা একাডেমি’ থাকায় মরমি কবি হাছন রাজার নামে হচ্ছে না আলাদা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সুনামগঞ্জ সফরে এলে বিষয়টি সামনে আসে। তবে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করে হাছন রাজার নামেও আলাদা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দাবি সংস্কৃতিজনদের। আর সংশ্লিষ্টরা জানালেন, কোথাও এটি থাকলে সংশোধন করা হবে।
শহরের তেঘরিয়া এলাকায় হাছন রাজার উত্তরাধিকারদের পরিচালিত ছোট আকারের একটি মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালা রয়েছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় এই সংগ্রহশালার সবকিছুই নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার প্রায় দেড় বছর পর মিউজিয়ামটি আবার চালু করা হয়। সঙ্গত কারণেই আগের থেকে সংগ্রহ কম। আছে দৈন্যতাও।
সম্প্রতি বরিশাল থেকে দিব্য হাওলাদার নামে একজন বেড়াতে আসেন হাছন রাজার তেঘরিয়ার বাড়িতে। তিনি বললেন, ‘হাছন রাজার স্মৃতি সংরক্ষণে কোনো মিউজিয়াম নেই, পারিবারিক উদ্যোগে যা আছে, তা খুবই সামান্য। শুধু পরিবারের নয়, পুরো পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষীদের প্রিয় নাম হাছন রাজা। তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে।’
কলকাতা থেকে হাছন রাজা মিউজিয়াম দেখতে এসেছেন চন্দন দাশ। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ভিডিও বানিয়ে তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসরত বাঙালিরা হাছন রাজার গান শুনেন, চর্চা করেন। আমাকে দারুণভাবে হাছন রাজার গান প্রভাবিত করে। সেজন্য স্বপ্ন ছিল হাছন রাজার বাড়িতে যাব। কল্পনায় যেভাবে হাছন রাজার বাড়ি ভেবেছিলাম, বাস্তবে তার উল্টো দেখলাম। এখানে কোনো কিছুই নেই। পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়াম করা হয়েছে। মিউজিয়ামেও হাতে গোনা কিছু উপকরণ আর ছবি আছে। চাওয়ার থেকে অনেক কম নিয়ে গেলাম।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল করিম, দুর্বিন শাহ্ ও রাধারমণ দত্তকে নিয়ে সরকার আলাদাভাবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত মার্চ মাসে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির প্রকৌশলীরা এসব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের স্থানও পরিদর্শন করেছেন। কেবল দুর্বিন শাহ্ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জমিতে কিছুটা জটিলতা রয়েছে।
জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাভেল জানান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সম্প্রতি সুনামগঞ্জে এসেছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চেয়েছেন হাছন রাজার নামে কেন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হচ্ছে না। দায়িত্বশীলরা জানান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির নামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ‘হাছন রাজা শিল্পকলা একাডেমি’ নাম যুক্ত আছে। এ কারণে আলাদাভাবে হাছন রাজা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি বর্তমান জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন উদ্বোধনের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল ‘হাছন রাজা শিল্পকলা একাডেমি’র নামে পরিশোধ করছেন। এখন নামের সেই জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আবেদীন বললেন, ‘হাছন রাজার নামে আলাদা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার দাবি আমাদেরও। বর্তমান শিল্পকলা একাডেমি ভবন তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জেলা শিল্পকলা একাডেমি নামেই উদ্বোধন করেছেন। কাগজপত্রে কোথাও যদি জেলা শিল্পকলা একাডেমির নামের সঙ্গে হাছন রাজার নাম যুক্ত থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কেউ এটি ভুল করেছেন। এটি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ রকম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে সংশোধনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’