× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উদ্বোধনের আগেই স্কুল ভবনে ফাটল

হাফিজুর রহমান চয়ন, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোণা)

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৫ পিএম

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৮ পিএম

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রবা ফটো

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রবা ফটো

নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ উপজেলার রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে উদ্বোধনের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের জন্য এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজনের। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঝুঁকি নিয়ে নতুন ভবনে কার্যক্রম চালাতে শিক্ষকরা অনীহা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে ভবনের নকশার পরিকল্পনায় ভুলের জন্য এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারসহ স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী।

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের রানাহিজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রক্রিয়া শেষে ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৭ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পায় কিশোরগঞ্জের মেসার্স রাজিব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান। মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হয়। 

স্থানীয় ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর গত জুলাই মাসে হস্তান্তর করা হয়। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বাকি। এ অবস্থায় দেখা দিয়েছে ফাটল। তাদের অভিযোগ, ঠিকাদার ভবন নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে যেনতেনভাবে কাজ করছেন। নতুন ভবনের শ্রণিকক্ষে পাঠদান ও গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ওই ভবনের সামনের বারান্দার অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। তা যেকোনো সময় মূল ভবন থেকে খুলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেলিংয়ের এক পাশও খুলে পড়ে গেছে। এরই মধ্যে উঠে গেছে দেয়ালের রঙ। এ ছাড়া দেয়ালের পলেস্তারাও করা হয়েছে দায়সারাভাবে। 

জান্নাত আক্তার, সামিয়া আক্তার, মো. ইসমাঈল, আহসান হাবিবসহ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, নতুন এ ভবনের সামনের অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই জীনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনের শ্রেণিকার্যক্রমে অংশ নিতে চাচ্ছে না।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা আক্তার বলেন, ‘ঠিকাদার বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ যেনতেনভাবে করায় সামনের অংশের দুই পিলারের মাঝে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। এই অবস্থায় সেখানে কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ ভয়ে সেখানে যেতে চাচ্ছে না। তাই পুরাতন ভবনেই কার্যক্রম চালাচ্ছি।’ বিষয়টি এলজিইডি প্রকৌশলীসহ শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, কাজ শুরুর পর বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করেন ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠানের মালিক শাহ আলম মাহবুব রাজিব। ফলে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করলেও ঠিকাদারের পক্ষে কাজ করেছেন তার শ্বশুর। শ্বশুরের প্রভাব খাটিয়ে বিনা পরিদর্শনে প্রত্যয়ন পেয়েছেন। আর প্রভাবশালী মতিউর রহমানের ভয়ে কাজের অনিয়মের বিষয়ে কেউই প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান বলেন, ‘কাজে ঠিকাদারের কোনো গাফিলতি ছিল না। ঠিকাদার সামনের পিলারগুলো রড দিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এলজিইডির প্রকৌশলীই সেগুলো ইট দিয়ে করতে বলায় এমনটা হয়েছে।’

ঠিকাদার শাহ আলম মাহবুব রাজিব বলেন, ‘এই ভবনের কাজ করতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাশে পানি থাকায় বছরে তিন মাসের বেশি কাজ করা যায়নি। যাতায়াতব্যবস্থা খারাপ থাকায় মালামাল পরিবহনেও সমস্যা হয়েছে। তাই কাজটি শেষ করতে বেশি সময় লেগেছে।’

নিম্নমানের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের ইস্টিমিট আগের হওয়ায় বর্তমানে নির্মাণসামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া ডিজাইনের থেকে বেশি উঁচু করতে হয়েছে ভবনটি। সামনের পিলারগুলো পাঁচ ফুটের বেশি উঁচু করতে হয়েছে। নিচে পানি থাকার কারণে তা দেবে গেছে।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ভবন নির্মাণের বিষয়টি পুরোপুরি এলজিইডির হাতে। নির্মাণ শেষে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয় প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রত্যয়নও তিনিই দেন। অনিয়মের বিষয়ে এলজিইডিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সোয়াইব ইমরান বলেন, ঠিকাদারের কাজে তেমন গাফিলতি ছিল না। ভবন নির্মাণের নকশার পরিকল্পনায় ভুল ছিল। পূর্বের প্রকৌশলীরা ভুলটা করে গেছেন। নিচু জায়গায় অন্য ডিজাইনে এটি করার দরকার ছিল। সামনের যে অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে ওই পিলারগুলো রড আর কংক্রিট দিয়ে করলে এমনটা হতো না। তবে ডিজাইন ইস্টিমিটে ইট ধরা ছিল। দ্রুত ফাটল মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা