কুমিল্লা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:২২ পিএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৩২ পিএম
স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জাকির হোসেন। সংগৃহীত ছবি
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিজ বাড়ির পাশ থেকে জাকির হোসেন (৩৫) নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জাকির বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে মোকাম গ্রামের বাড়ির পাশ থেকে জাকিরকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জাকিরকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জাকিরের পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিরা জানান, গতকাল ভোর ৪টার দিকে একদল পুলিশ জাকিরের বাড়িতে এসে দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করতে থাকেন। পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে জাকির পেছনের দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাকে ধাওয়া করে। এরপর অনেকক্ষণ ঘরে না ফেরায় এবং আশেপাশে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন, জাকিরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু সকালে বাড়ির অদূরে জাকিরকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যদের খবর দেন স্থানীয়রা।
জাকিরের স্ত্রী পলি আক্তার জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে জাকিরকে উদ্ধার করে স্থানীয় কাবিলা ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গতকাল জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পারিবারিক কবরস্থানে জাকিরকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনও মামলা হয়নি।
এদিকে জাকিরের মৃত্যুর কারণ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে জাকির মারা গেছেন। এ প্রসঙ্গে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি করে আসছিল। গতকাল ভোররাতে পুলিশ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের জাকির হোসেনের বাড়িতে যায়। সকালে বাড়ির পাশে জাকিরের মরদেহ পাওয়া যায়। জাকিরের দুই হাতে হ্যান্ডকাপ পরানোর চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হতে পারে। বুড়িচং উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
তবে জাকিরের স্ত্রী পলি আক্তারের দাবি, তার স্বামী স্ট্রোকের রোগী ছিলেন। এর আগেও দুবার স্ট্রোক হয়েছে তার। গতকাল স্ট্রোক করেই তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের ধাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি পলি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোকাম এলাকাটি বুড়িচং থানার দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন। এ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জাবেদ উল ইসলাম জাকিরকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ জাকিরকে গ্রেপ্তার করতে তার বাড়িতে গিয়েছিলো। কিন্তু তাকে ঘরে না পেয়ে পুলিশের সদস্যরা ফিরে আসেন। তবে কী অভিযোগে পুলিশ জাকিরকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিলো সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বুড়িচং থানার ওসি আবুল হাসনাত খন্দকারও জাকিরকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে মৃত্যুর কারণ, মামলা না হওয়া এবং ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।