প্রবা প্রতিবেদক (ঢাকা, মাদারীপুর ও দৌলতপুর)
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪০ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯ পিএম
শুরু হলো পদ্মা সেতু দিয়ে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল। ট্রেনের প্রথম যাত্রায় ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। এই ট্রেনে করে ৮ ঘণ্টায় খুলনা থেকে ঢাকা আসতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে নির্বিঘ্ন এই রেলযাত্রায় খুশি যাত্রীরা। পদ্মা সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানালেও ভাড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ।
প্রথমবারের মতো কুষ্টিয়ার কোর্ট স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় গেল ট্রেন। যার মাধ্যমে পূর্ণ হয়েছে কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া।
ভাঙ্গা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন কাজল কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, আমাদের একটি ট্যুর গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপের সাতজন মিলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলা প্রথম ট্রেনে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা যাচ্ছি। অনেক খুশি লাগছে। আমি পদ্মা সেতু চালুর পর প্রথম যাত্রী, মেট্রোরেলের প্রথম ও কর্নফুলী টানেলেরও প্রথম যাত্রী হয়েছি। এবার পদ্মা সেতু ট্রেনের প্রথম যাত্রী হলাম।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী আব্দুর রহিম বলেন, আগে আমরা যমুনা সেতু ঘুরে ৮ ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছতাম। আজ পদ্মা সেতু দিয়ে ৫ ঘণ্টায় ঢাকা আসলাম। আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে সুবিধা করে দিয়েছেন, সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে ট্রেনের ভাড়া একটু বেশিই মনে হয়েছে। ভাড়া কমানো প্রয়োজন।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসের সহকারী লোকোমাস্টার আসাদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর অনুভূতি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলাম কবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেব। আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। যাত্রী নিয়ে নির্বিঘ্নেই আমরা ঢাকা এসেছি।
ভাঙ্গা রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। খুলনা থেকে ভাঙ্গা ৩০১ কিলোমিটার আর ভাঙ্গা থেকে ঢাকা ৮২ কিলোমিটার দূরত্ব। মোট ৩৮৩ কিলোমিটার পথ। যশোরের রুট চালু হলে এই দূরত্ব আরও কমে আসবে।
গত ১ নভেম্বর বুধবার সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ফরিদপুর, ভাঙ্গা স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে। ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটিতে ১৩টি বগিতে ৮২০টি আসন রয়েছে। প্রতিটি বগিতে নির্ধারিত আসন ছাড়াও দাঁড়িয়ে এসেছেন অনেক যাত্রী।
ট্রেনের শোভন চেয়ারে ভাড়া ধরা হয়েছে ২৩৫ টাকা, এসি স্নিগ্ধা ৪৫০ টাকা, ফরিদপুর থেকে ঢাকা এই দুই শ্রেণিতে যথাক্রমে ২৬৫ ও ৫১২ টাকা। খুলনা থেকে ঢাকা এই দুই শ্রেণিতে ৫০০ টাকা ও ৯৫৫ টাকা এবং এসি বাথ শ্রেণিতে প্রতি যাত্রীকে গুনতে হবে ১ হাজার ৭২০ টাকা করে।
২ নভেম্বর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে বেলা ৩টা ৫০ মিনিটে খুলনা পৌঁছে। বৃহস্পতিবার বেনাপোল থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছে। এছাড়া রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় বেনাপোলের উদ্দেশে। ট্রেন দুটি ভাঙ্গার পর আর কোনো স্টেশনে থামবে না।
এদিকে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় যায় ট্রেন।
আপাতত দুটি এক্সপ্রেস ট্রেন এই রুটে চলবে। একটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস, আরেকটি বেনাপোল থেকে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস। রেলওয়ে পশ্চিমের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আবদুল আওয়াল স্বাক্ষরিত দপ্তারাদেশে এ খবর জানানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে স্টেশন ইনচার্জ ইতি আরা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাত সোয়া ১টায় সুন্দরবন এক্সপ্রেস আর বিকাল ৪টা ৫৬ মিনিটে বেনাপোল এক্সপ্রেস কোর্ট স্টেশনে পৌঁছবে। স্টেশনে থাকবে ৩ মিনিট, এরপর ট্রেনটি ছেড়ে যাবে এ স্টেশন থেকে। এ স্টেশনের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ৪০টি শোভন চেয়ার ও ২০টি এসি সিট বরাদ্দ আছে। আর বেনাপোল এক্সপ্রেসের ৩০টি শোভন চেয়ার ও ১০টি এসি সিট বরাদ্দ করা হয়েছে। শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫০ টাকা। আর এসি সিটের ৫৮০ টাকা। এসি সিটে মূল ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে ঢাকার ট্রেন চলাচল করবে জেনে আমরা আনন্দিত। যেহেতু ট্রেন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই স্টেশন থেকে ট্রেন সরাসরি যাচ্ছে ঢাকায়। আশা করছি, স্বল্প খরচ ও অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছতে পারব।
তবে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের আয়তন বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন অনেকে। এমনটা করা না হলে যাত্রী ওঠানামায় সমস্যা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১০ অক্টোবর এ রুটে ট্রেন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।