আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১১:১২ এএম
বন্ধ একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রবা ফটো
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দায়িত্বে অবহেলায় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ দিন দিন ভেস্তে যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। তবে ক্লিনিকগুলোর সেবার বিষয়ে কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বহীনতার কথা বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ৬ হাজার জনগণের জন্য একটা কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা থাকলেও আনোয়ারায় রয়েছে ২৯টি। তিন মাস পরপর ২৭ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয় এসব ক্লিনিকে। যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রসবপূর্ব (প্রতিরোধ টিকা দানসহ), প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর সেবা। এ ছাড়া সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা, পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগ, কৃমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সময়মতো প্রতিষেধক টিকা; যেমন যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কশি, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদিসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও দেওয়ার কথা রয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে এসব সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উপজেলার প্রান্তিক জনসাধারণের। তারা জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সিএইচসিপিদের দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু তারা আসেন সকাল ১০টার পর। আবার চলে যান দুপুর ১টার আগে। প্রয়োজনীয় ওষুধও বিতরণ করা হয় না।
সম্প্রতি উপজেলার বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়া এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, দুপুর ১টার সময়ও ক্লিনিকটি বন্ধ। এই ক্লিনিকের দায়িত্বে জানে আলম নামে একজন সিএইচসিপি রয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় শাহনুর নামে এক নারী জানান, সে ইচ্ছেমতো আসে আর যায়। আসা-যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট টাইম নেই। যার কারণে অনেকজনকে এসে ফিরে যেতে হয়। মো. আসিফ নামে এক যুবক জানান, ক্লিনিকে মাসের শুরুতে এলে বলে ওষুধ আসেনি। আর শেষের দিকে এলে বলে শেষ হয়ে গেছে। দেখার কেউ নেই, এভাবে ইচ্ছেমতো চলছে সবকিছু। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ ক্লিনিকেরই এমন অবস্থা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সিএইচসিপিদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণ হলো জবাবদিহির অভাব। কমিটির সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্যরা। তারা এই বিষয়ে তদারকি করে না। তা ছাড়া কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রতিমাসে সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয় না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবার ওষুধের বক্স খোলার সময় সভাপতিকে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু কোনো ক্লিনিকের সভাপতি সেই দায়িত্ব পালন করেন না। মূলত ইউপি সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।’
ইউপি সদস্যদের অবহেলার বিষয়ে আনোয়ারা ইউপি মেম্বার কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক বলেন, ‘আসলে বিষয়টি সম্পর্কে অধিকাংশ ইউপি সদস্য অজ্ঞ। তাই বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের সচেতন করব। তাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব পরিধি সম্পর্কে অবহিত করব।’