× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রামগতি-কমলনগরের কমিউনিটি ক্লিনিক

ইচ্ছে হলে খোলেন তালা যখন-তখন বন্ধ

আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০১ পিএম

ইচ্ছে হলে খোলেন তালা যখন-তখন বন্ধ

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা বেহাল। বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রায় সময় তালা ঝুলতে দেখা যায়। ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না এ সময়সূচি। দিনে কখনও এক ঘণ্টা, কখনও দুই ঘণ্টার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। বাধ্য হয়ে অনেকেই নিজেদের মতো করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বেসরকারি ক্লিনিকে বা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমলনগর উপজেলায় তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং রামগতি উপজেলায় দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কমলনগরের চরকাদিরা, চরফলকন, হাজিরহাট ও রামগতির আলেকজান্ডার বাজার ও রামগতি বাজারে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার কথা। তবে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায় সময় থাকে বন্ধ। আবার খোলা পেলেও পাওয়া যায় না প্রয়োজনীয় ওষুধ।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এক-দুই টাকা দামের ট্যাবলেট দিয়ে বিদায় করা হয়। বলা হয় ওষুধ আসে না। অন্য ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। দামি ওষুধ নিতে ৫০-১০০ টাকা দিতে হয়। আর বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে। 

গত বুধবার কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা নুরুন্নাহার এমন অভিযোগ করেন। দরজার সামনে তখনও অপেক্ষায় বেশ কিছু নারী। চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায়। কিন্তু তারা সবাই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে পরে চলে যান। 

একই ক্লিনিকে যান ৪১ বছর বয়সি নাজমুন্নাহার। জানালেন, এর আগেও এক দিন দুপুর ১২টার দিকে এসেও তালা ঝুলতে দেখেছেন ক্লিনিকে। তিনি বলেন, ‘এখানে সেবা শুধু নামে মাত্র। তারা ইচ্ছেমতো আসে, ইচ্ছেমতো যায়।’

বাচ্চা কোলে নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তানিয়া আক্তার নামের আরেক নারী। তিনি তার এক বছর বয়সি মেয়ে সালমা বেগমের টিকার কার্ডের জন্য এসেছিলেন। অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছিলেন। টিকা কার্ডের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ঘুরে যেতে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, আগেরবার যখন ক্লিনিকটিতে আসেন, সেদিন কার্ডের খরচ বাবদ তার কাছ থেকে ১০০ টাকা চাওয়া হয়েছে, যা বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। সবাই টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে এগুলো এখন সাধারণ চিত্র। সকাল ৯টায় খোলার কথা থাকলেও কোনো ক্লিনিক খোলে ১২টায়, কোনোটি ১টায়, কোনোটি দুপুরের পর, কোনোটি আবার ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ থাকে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আবার খোলা হলে কতক্ষণ চলবে, তারও নেই ঠিকঠিকানা।

রামগতির চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান হোসেন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি মাঝেমধ্যে এসে দায়িত্ব পালন করেন। রেশমা বেগম নামের একজন মূল দায়িত্বে রয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। রেশমা বেগমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

চর হাসান হোসেন নবিয়ল তেহমুনী এলাকার রহমত উল্লাহ, রুহুল আমিন ও নছিরুল হকসহ স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকেও পাওয়া গেল নানা অভিযোগ। তারা বলেন, ক্লিনিকটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। মাঝেমধ্যে মন চাইলে এসে কিছুক্ষণ বসেন, আবার চলে যান। কেবল এই ক্লিনিক নয়, উপজেলার সব কমিউনিটি ক্লিনিকের একই চিত্র।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ক্লিনিকগুলোতে ২৭ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। সার্ভিস প্রোভাইডর, পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, অফিস সহকারীসহ তিন-চারজন কর্মরত থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগই আছে কাগজে-কলমে। বরাদ্দ থাকলেও ওষুধ কোথায় যায়, কর্মীরা কী করেন, সেসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, জনবল ও চিকিৎসক সংকটসহ নানা কারণে তারা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সমস্যায় জর্জরিত এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এসব বিষয়ে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, এসব ক্লিনিকে ২৭ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মিত ডিউটি করতে হবে। কোনো অবস্থাতে ডিউটি ফাঁকি দিতে পারবে না। কোনো স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন আহাম্মদ কবীর বলেন, এসব বিষয়ে কর্মকর্তাদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। অসময়ে ক্লিনিকে আসা কিংবা তালা ঝুলানো, অবৈধভাবে টাকা নেওয়াসহ ওষুধ বিক্রি না করার বিষয়গুলো তদারকি করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা