ভোলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২১ পিএম
নির্মিত সেতুতে উঠতে হয় সাঁকো বেয়ে। প্রবা ফটো
সেতু আছে; তবে সংযোগ সড়ক নেই। তাই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুতে উঠতে হয় সাঁকো বেয়ে। সেতু নির্মাণের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সুপারি গাছ দিয়ে তৈরি করে ওই সাঁকোটি।
ভোলা সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ-পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইনিয়নের সদুর চর জাঙ্গালিয়ার হাট-নরোনা রোড ভায়া দুলামিয়ার বাড়ি সড়কে ২০ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুর সঙ্গে ১ হাজার ৫০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তা এবং সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের মাদরাসা বাজার নাজিম উদ্দিন আলম রোড-ইউনিয়ন পরিষদ রোডে ১৮ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুর সঙ্গে ৮০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তার কাজ শুরু হয়। ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি সেতু ও ২ হাজার ৩০০ মিটার ইটের সলিং রাস্তার কাজ গত বছরের ১৩ মে শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
ভোলা সদর উপজেলার এলজিইউডির বাস্তবায়নাধীন সেতুটি নির্মাণের যৌথভাবে দায়িত্ব পায় ভোলার স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেড ও ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। কাগজে কলমে কাজটি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে হলেও কাজটি করছেন পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সদূর চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভোলা খেয়াঘাট খালের শাখা সদুরচর খালের ওপর দুলামিয়ার বাড়ির উত্তর পাশে একটি নির্মাণাধীন সেতু। এটির দুই পাশের গাইড ওয়াল ও ওপরের স্লাব ঢালাই হলেও সেতুতে উঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। দুই পাশের গাইড ওয়ালের কাজও পুরোপুরি সম্পূর্ণ করা হয়নি। এখনো লম্বা লম্বা রড বের হয়ে রয়েছে। ওপরের স্লাবের দুই পাশে কোনো রেলিং দেওয়া হয়নি। শুধু রড বের করে রেখেছে। স্থানীয় মানুষ সেতুর দুই পাশে সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে তা পারপার হচ্ছেন। অনেক সময় বৃদ্ধ ও নারী-শিশুরা এদিক দিয়ে পারপারের সময় নিচে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সেতুটির পূর্ব পাশে ইটের সলিং রাস্তা রয়েছে। রাস্তার প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিটারজুড়ে বড় গর্ত হয়ে আছে। অনেক জায়গায় ৪-৫ ফুট করে নিচের দিকে দেবে গেছে।
একই এলাকার বাসিন্দা ফরিদ উদ্দিন ও সিরাজ সিকদার জানান, অনেক দিন ধরে সেতুটির কাজ শেষ না করে ফেলে রেখেছে। কী কারণে এটি করে না, তা তাদের জানা নেই। বর্তমানে দুই পাশের মানুষের যাতায়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি সেতুতে উঠতে সাঁকোই লাগে তাহলে তো আগের সাঁকোই ভালো ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আনু বেগম জানান, ব্রিজের কাজ শেষ না করে ফেলে রাখায় সেখানকার মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশুরা স্কুলে যেতে কষ্ট করে সাঁকো বেয়ে সেতু পার হতে হয়। আবার বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের তো ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় পশ্চিম ইলিশার ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নবারুন ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক মো. রনি জানান, কাজটি তাদের লাইসেন্সে অন্য একজন করছেন। তাই কী কারণে কাজটি ফেলে রেখেছে সেটি তার জানা নেই।
উপজেলার এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী জমিস উদ্দিন জানান, সেতুর কাজ অনেকটাই শেষ। এখন শুধু দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে। বৃষ্টির কারণে সেটি করতে পারেনি ঠিকাদার। আগামী সপ্তাহে কাজ পুনরায় শুরু করা হবে। আশা করি খুব দ্রুত সেতুর কাজ শেষ হবে।
ভোলা সদর উপজেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শিবলু কর্মকার জানান, এরই মধ্যে সেতুটি নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ঠিকাদার খুব শিগগিরই সেতুটির বাকি কাজ শুরু করবে।
আগামী দুই আড়াই মাসের মধ্যে এ প্যাকেজের পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।