খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা অফিস
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৮ পিএম
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. শহীদুর রহমান খানের ছেলেমেয়েসহ ৬ স্বজনের নিয়োগ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে নিয়মে অনিয়মের কারণে ২৪ শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত এবং এক শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিলের র্নিদেশ দিয়েছে মন্ত্রনালয়।
নিয়োগ বাতিলকৃতরা হলেন শহীদুর রহমান খানের মেয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ইশরাত খান, তার ছেলে সহকারী রেজিস্ট্রার শফিউর রহমান খান, সাবেক উপাচার্যের শ্যালক শাখা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, তিন ভাতিজা কম্পিউটার অপারেটর নিজাম উদ্দিন, মিজানুর রহমান এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেনের নিয়োগ।
সোমবার (৬ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হলেও বুধবার বিকেলে পত্রপ্রাপ্তির পর এ বিষয় জানাজানি হয়। তবে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাবেক উপাচার্যের একান্ত আস্থাভাজন আশিকুল আলমকে ছাড় দেয়া হয়েছে বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই আদেশে সহকারী অধ্যাপকের পদ থেকে তাকে পদাবনতি দিয়ে প্রভাষক করা হয়েছে। এছাড়া ইতির্পূবে নিয়োগ বাতিলের জন্য সুপারিশকৃত ৪৬ জন শিক্ষক ও ৩ কর্মচারীর নিয়োগে অনিয়ম-র্দূনীতির অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে বলেও মন্ত্রনালয়ের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উপাচার্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ শুরু হয়। কিন্তু নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটি গঠনের এক বছর পর গত বছরের জানুয়ারিতে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও র্দূনীতির মাধ্যমে উপাচার্যের আত্মীয়স্বজন ও অযোগ্য লোক নিয়োগের তথ্য উঠে আসে। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে উপাচার্যের ছেলে-মেয়েসহ ০৯ আত্মীয়ের নিয়োগ বাতিল করতে বলা হয়।
এছাড়াও সাবেক উপাচার্য তার দুই ভাতিজাকেও নিয়োগে দেন। তারা হলেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে মুরাদ বিল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে সুলতান মাহমুদ। একইভাবে উপাচার্যের শ্যালিকার ছেলে সায়ফুল্লাহ হককে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ)পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগ পাওয়া নিজামউদ্দিনও উপাচার্যের আত্মীয়। এছাড়া নিজের স্ত্রী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগমকেও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সরাসরি অধ্যাপক পদে নিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ০৩ আগস্ট উপাচার্যের ছেলে-মেয়েসহ ০৯ স্বজন এবং ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু উপাচার্য ড. শহীদুর রহমান খান মন্ত্রনালয়ের র্নিদেশনার বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেননি। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসেবে ড.শহীদুর রহমান খানের মেয়াদ শেষ হয়।
নিয়োগ বাতিলের সুপারিশের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২৪ মার্চ পুনর্মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। ২৩ আগস্ট কমিটি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। পুনর্মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রালয় থেকে সাবেক উপার্চাযের ছেলে-মেয়েসগ ০৬স্বজনের নিয়োগ বাতিল, ২৪শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত ও এক শিক্ষকের পদোন্নতি বাতিল করার নির্দেশনা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশিকুল আলম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা নিয়ে তারা জরুরি বৈঠকে করে পরবর্তী করনীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম চৌধুরী জানান, বিষয়টি আগের উপার্চাযের সময়ের বিষয়।শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও ইউজিসি একাধিকবার এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমার এ বিষয়ে কিছুই করনীয় নেই। মন্ত্রনালয়ের আদেশের বিষয়ে সভা করে সবার পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।