সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৭ পিএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৭ পিএম
কিশোরগঞ্জের পৌর শহর ও শহরতলিতে দিনভর অবাধে চলছে ট্রাক্টর। জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির একাধিক সভায় দিনের বেলায় এসব যান চলাচল নিষিদ্ধের কথা বললেও সিদ্ধান্ত কার্যকরে তৎপরতা নেই সংশ্লিষ্ট কোনো মহলেরই। ফলে অনিয়ন্ত্রিত এই যানের কারণে শব্দদূষণের পাশাপাশি তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে শহরবাসীকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের প্রধানত ব্যস্ত সড়কগুলোতেও দিনে একাধিক ট্রাক্টর চলাচল করছে। এতে সারা শহরে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজটের। অচলাবস্থা নেমে আসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় লোকজনকে। এমনকি আটকে পড়া যানবাহনের জন্য পায়ে হেঁটেও রাস্তা পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো সড়কে ট্রাক্টর ঢুকলে হাজার হাজার ইজিবাইক, রিকশা ও অন্যান্য যান আটকে পড়ে। এ ছাড়াও বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
মো. আমজাদ হোসেন, বিলকিস বেগম নামের দুই অভিভাবক জানান, ট্রাক্টর সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপার নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। এ ছাড়া যানজটের কবলে পড়ে অতিরিক্ত সময় তো ব্যয় করতেই হয়। তারা জানান, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক।
কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এনায়েত করিম অমি জানান, শহরে দিনের বেলায় ট্রাক্টর ও মালবাহী বিভিন্ন যান অবাধে চলার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সে করে কোনো রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? জেলার সর্বোচ্চ ফোরামে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন না হওয়া খুবই দুঃখজনক।
শহরের শোলাকিয়ার বাসিন্দা আমিনুল হকসহ একাধিক পৌরবাসী জানান, ২০ বছর আগে এত বেশি ট্রাক্টর ছিল না। এখন নির্মাণসামগ্রী পরিবহন থেকে সবকিছুতেই ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে পৌর শহরে ট্রাক্টর অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। ফলে শহরের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ট্রাক্টরের দাপট আর শব্দের কারণে শিশু শিক্ষার্থী নিয়ে অভিভাবকরা সব সময় উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন।
ট্রাক্টর নিয়ন্ত্রণে পৌর কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন ইদু জানান, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই শহরতলি ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক-ট্রাক্টর শহরে চলে আসে। এ কারণে ট্রাক্টর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ করা গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। পাশাপাশি শহরে ট্রাক্টরের চাপ কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
পরিবেশ রক্ষা মঞ্চের (পরম) সভাপতি অধ্যক্ষ শরীফ মো. সাদী বলেন, ট্রাক্টর শহরে শব্দদূষণের যানজটের অন্যতম কারণ। পরমের পক্ষ থেকে দিনের বেলায় ট্রাক-ট্রাক্টর বন্ধ করার দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষ।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. শাহজাহার বলেন, দিনের বেলায় ট্রাক্টর বন্ধ করা না গেলে শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। শহরে যান চলাচলের বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা অত্যান্ত জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, ট্রাক্টর, ট্রাক ও ভটভটির আধিক্য শহরের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র এবং অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর একটি পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করলে দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে।