বরগুনা সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৯ পিএম
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৯ পিএম
অযত্ন-অবহেলার ধ্বংসের পথে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। প্রবা ফটো
বরগুনার নৌপথে রোগী বহনের জন্য ২০০৮ সালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করেছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। সিডর-পরবর্তী সময়ে এটি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রদান করা হলেও সেই থেকে এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি অ্যাম্বুলেন্সটি। দীর্ঘদিনের অযত্ন-অবহেলার ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্ছার সঙ্গে এখন ধ্বংসের পথে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি।
জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে বরগুনার নৌ-পথে রোগী পরিবহনের জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি প্রদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে খাকদোন নদীর চরে ফেলে রাখার পর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে এখন নৌ-অ্যম্বুলেন্সটির ঠিকানা হয়েছে জেনারেল হাসপাতলের পুরোনো ভবনের পূর্বপাশে পরিত্যক্ত স্থানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের পেছনে ফেলে রাখায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি শুন্যলতা আর আগাছায় ছেয়ে আছে। যার যন্ত্রপাতিশূন্য অবকাঠামোই টিকে আছে।
নৌ-অ্যম্বুলেন্সটির চালক আবদুর রহমান বলেন, এটি চালানোর জন্য আলাদা কোনো চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সড়ক পথের অ্যম্বুলেন্সের পাশাপাশি আমাকে এটি চালানোর দায়িত্ব দিলেও আমি এখন পর্যন্ত এটিতে কোনো রোগীই পরিবহন করতে পারিনি। এর অবকাঠামোটি এখানে পড়ে থাকলেও দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালের ভাণ্ডারে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের ভাণ্ডার সংরক্ষক বদরুল আমিন বাদল বলেন, আমি গত ১৮ জুলাই এখানে যোগদান করেছি। তখন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত ভাণ্ডার সংরক্ষক আল আমিন আমাকে ভাণ্ডারে সংরক্ষিত শুধুমাত্র ১৩ প্রকারের ওষুধের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তাই ভাণ্ডারে নৌ-অ্যম্বুলেন্স ও এর কোনো ইঞ্জিন সংরক্ষণের বিষয় আমার জানা নেই।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভাণ্ডার সংরক্ষক অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আল আমিন বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালেই সংরক্ষিত আছে। তত্ত্বাবধায়ক স্যার জেলার বাইরে আছেন, তিনি এসে অনুমতি দিলে দেখানো যাবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক লোকমান হাকিম বলেন, আমিও নতুন যোগদান করেছি। তবে যতদূর জানি, উপকূলীয় জেলা বিবেচনা করে নৌ-পথে রোগীদের সেবায় নৌ-অ্যম্বুলেন্সটি দেওয়া হলেও খরচের কারণে রোগীরা যাতায়াত না করায় এটি অচল হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়েছে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ব্যপক প্রচারসহ সঠিক ব্যবস্থাপনা। অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। শুধু নৌ-অ্যাম্বুলেন্সই নয়, হাসপাতালটিতে দেওয়া অত্যাধুনিক হিমায়িত অ্যাম্বুলেন্সটিও চালকদের সঠিকভাবে অপারেট করতে না জানার কারণে একই রকম পড়ে থাকছে। এটির অবস্থাও এমন হতে সময় লাগবে না।
বরগুনার সিভিল সার্জন ফজলুল হক বলেন, জেনারেল হাসপাতালের কোনোকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।