× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাস্তায় পানি জমলেই দেখা যায় গ্যাসের বুদবুদ, জনমনে আতঙ্ক

নাঈম ইসলাম, শেরপুর

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:১৫ পিএম

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম

শেরপুর শহরের নারায়ণপুর মহল্লার রাস্তায় জমা পানিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে সঞ্চালন লাইনের ছিদ্রপথে বের হওয়া গ্যাসের বুদবুদ। প্রবা ফটো

শেরপুর শহরের নারায়ণপুর মহল্লার রাস্তায় জমা পানিতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে সঞ্চালন লাইনের ছিদ্রপথে বের হওয়া গ্যাসের বুদবুদ। প্রবা ফটো

শেরপুর শহরের তিতাস গ্যাসের পাইপে অসংখ্য ছিদ্রের কারণে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিভিন্ন স্থানে সঞ্চালন লাইনের পাইপ ছিদ্র হয়ে নির্গত হচ্ছে গ্যাস। আতঙ্কে রয়েছে ওইসব রাস্তা বা এলাকা দিয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক-যাত্রী-পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে তারা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও সংস্কার করা হচ্ছে না এসব ছোট ছোট ছিদ্র বা লিকেজ।

সম্প্রতি রাস্তায় হাঁটার সময় পাইপের লিকেজ থেকে বুদবুদ আকারে গ্যাস বেরিয়ে যাওয়া দেখে আশিস দেবনাথ নামে এক পথচারী এই প্রতিবেদককে ফোন করেন। পরে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের নারায়ণপুর, গৃদ্দানারায়ণপুর, শিববাড়ি, নাগপাড়ার প্রধান সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন মহল্লায় মাটির নিচে সঞ্চালন লাইনের গ্যাস বুদবুদ আকারে বেরিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন গ্যাসের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। স্থানীয়রা জানান, স্বাভাবিক দিনগুলোতে বুদবুদ দেখা না গেলেও বৃষ্টি হলে কিংবা রাস্তায় খানাখন্দে জমে থাকা পানিতে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। এসব বিষয়ে জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার মৌখিক অভিযোগ জানিয়েও স্থায়ী প্রতিকার না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

টিজিটিডিসিএলের তথ্য মতে, শেরপুরে প্রায় ১২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে। এতে গ্যাসের সুবিধা পাচ্ছে চার হাজার ২০০ গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ, এভাবে বুদবুদ আকারে বের হওয়ার ফলে অনেক জায়গায় গ্যাস কম পাওয়া যায়। এ ছাড়া দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনগুলো শনাক্ত করে স্থায়ী মেরামতের দাবি তাদের। আবার অনেকেই অভিযোগ করেছে, ত্রুটিযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সমাধান মেলেনি। অথচ পানি জমে থাকলে গ্যাসের উৎস খুঁজে বের করা সহজ বলেও মনে করে তারা। এখন বৃষ্টির মৌসুম শেষ, তাই ত্রুটিযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়বে। বারবার বলার পর তারা এলেও সামান্য কিছু কাজকাম করে চলে যান, যা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।

গৃদ্দানারায়ণপুরের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘শহরের ত্রুটিযুক্ত জায়গাগুলো দিয়ে দিন-রাত যে পরিমাণ গ্যাস বের হয়, এতে করে শ’খানেক পরিবার অনায়াসেই রান্না করতে পারবে। আর বৃষ্টির মৌসুমে ভাঙা রাস্তাগুলোতে জমে থাকা পানিতে দেখা যায় কীভাবে গ্যাস বের হয়। অনেক দিন ধরে এই সমস্যা চললেও এর স্থায়ী সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই।’

শিববাড়ি এলাকার গৃহিণী রিধিকা পাল বলেন, ‘দেশের অগ্নিদুর্ঘটনার বেশিরভাগ সূত্রপাত গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকেই। তাই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন লাইন চিহ্নিত করে স্থায়ী মেরামত করা হোক। যাতে আমরা স্বস্তিতে রাস্তায় চলাচল করতে পারি। এখন সব সময় আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয়।’ 

নাগপাড়া মহল্লার সুভাস চন্দ্র দে বলেন, ‘বৃষ্টির সময় বুদবুদের বড় আকার হয়। আবার কোনো কারণে রাস্তায় পানি জমলেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেখে মনে হয় যেন ভেতরে পানি ঢুকছে। শুধু এই জায়গায় নয়, আশপাশেও জমে থাকা পানিতে এমন চিত্র দেখা যায়। এ থেকে বড় একটা সমস্যা হতে পারে। তাই লাইনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।’

বাগরাসা এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন অভিযোগ করে বলেন, ‘দুই মাস আগে এই রাস্তা দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে জানিয়ে তিতাস গ্যাস অফিসে অভিযোগ দিয়েছিলাম। পরে একজন লোক নিয়ে ঠিকাদার এসেছিলেন। পরিস্থিতি দেখে চলে গেছেন। এখন পর্যন্ত সমাধানে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা দেখেও না দেখার ভান করছে।’ 

মানবাধিকারকর্মী শাহজাহান তালুকদার বলেন, ‘তিতাস গ্যাস কোম্পানি একটি উদাসীন প্রতিষ্ঠান। তাদের উদাসীনতার কাছে জিম্মি গ্রাহকসহ শহরের বাসিন্দারা। তিতাস শুধু গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে, সেবা কিংবা দুর্ঘটনা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন লাইনের কারণে শহরের সড়কের যে ক্ষতি হচ্ছে, নাগরিকরা ঝুঁকিতে রয়েছেÑ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই দায় তিতাস কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।’

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাইপের মাধ্যমে যে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় লিকেজ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই দেখা যায়, পাইপ যেদিক দিয়ে গেছে সেদিক দিয়ে বুদবুদ বের হচ্ছে। এমনকি দেশলাইয়ের মাধ্যমে দেখা গেছে, সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে। লিকেজগুলো যদি দ্রুত মেরামত করা না হয়, ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে।’

শেরপুর টিজিটিডিসিএলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দুর্জয় খকসীর কাছে গেলে প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এ প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘শহরের যেসব জায়গায় লিকেজের আলামত রয়েছে, ব্যস্ততম বা জনবহুল জায়গা, মানুষের চলাচল বেশি, সেই জায়গাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে। আসলে আমাদের পক্ষে সব লিকেজের আলামত বের করা কঠিন। তাই সবার সহযোগিতা চাচ্ছি।’ গ্রাহকরা অভিযোগ দেওয়ার পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসেনি, যার ফলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা