প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪৭ পিএম
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ফেনীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। পুরো জেলায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান জমিতে ঢলে পড়েছে। প্রবা ফটো
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি শেষ পর্যন্ত ঝড় হিসেবে দুর্বল থাকলেও এর প্রভাবে টানা বৃষ্টি হওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আধাপাকা আমনের ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়ে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দিনভর ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে ছিল ভারী বৃষ্টি। এতে নুইয়ে পড়ে ধানক্ষেত। এ ছাড়াও টানা বৃষ্টিতে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, সরিষা, ধনিয়া পাতা ও শাকসবজির ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেদক ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-
বাগেরহাট : বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে আমনের আধাপাকা ধান। জেলার শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালীর নাজমুল হাসান বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে ধান একদম নুইয়ে পড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে ধান।
এ ছাড়াও পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানের বীজতলা। মাঠ-ঘাট ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি রয়েছে পানির নিচে। যার ফলে চারা দেওয়া ক্ষেতের ধান ভেসে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া চারা দেওয়ার জন্য বীজ ধান প্রস্তুত থাকলেও, পানি ও বৃষ্টির কারণে বীজতলায় বুনতে পারছেন না কৃষকরা।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ২০ কেজি বীজ ধান প্রস্তুত করেছিলাম চারা দেওয়ার জন্য। যে জমিতে বীজ বুনব সেখানে এখন প্রায় ২ ফুট পানি। শনিবারের মধ্যে পানি না কমলে, আমার ৭ হাজার টাকার ধান একদম পানিতে ফেলে দেওয়া লাগবে।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম পদ্মনগরের সফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার বীজ ফেলেছিলাম, চারা কেবল সামান্য বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু এখন চারার ওপর দেড় ফুট পানি। কী হবে জানি না। শুধু রবিউল বা সফিকুল নয়, কয়েক হাজার চাষির অবস্থা একই রকম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনও সময় রয়েছে, কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। ঘেরের পাড়ের সবজি ও শীতকালীন সবজিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। ঝড়ো বাতাস বৃদ্ধি পেলে আমন ধানের কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী বলেন, ‘ঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টির কারণে ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। এ পানি অপসারণের জন্য ইতোমধ্যে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্লুইস গেটগুলো খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বেশি সময় ধরে পানি থাকলে ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ভারী বৃষ্টির কারণে আমন ধানের বাম্পার ফলনেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে চাষিদের মধ্যে। প্রায় ২০ শতাংশ ধান হেলে পড়েছে। কেফায়েত হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের নোয়াখালীতে আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সব ধান আমরা তুলতে পারিনি। অনেক ধান হেলে পড়েছে। ফলে কৃষকের অনেক ক্ষতি হবে।’
হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেদ সবুজ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রায় ২০ শতাংশ আমন ধান হেলে পড়েছে। মাঠে থাকা শীতকালীন সবজির ও ক্ষতি হতে পারে। তবে আমরা এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাইনি। বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে সময় লাগবে।’
ফেনী : ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ফেনীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। পুরো জেলায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান জমিতে ঢলে পড়েছে। ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, জেলার প্রতিটি উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর আমন ধান জমিতে ঢলে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। ঝড়ের কারণে রবিশস্য আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে।
হোমনা (কুমিল্লা) : কুমিল্লার হোমনায় অধিকাংশ ফসলের ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, সরিষা, ধনিয়া পাতা ও শাকসবজি ক্ষেতে পানি জমে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই এসব জমিতে তারা বীজ বপন করেছেন। পানি জমে এখন সব নষ্ট হয়ে যাবে।