× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জিগাতলায় সাদা-বুক মাছরাঙা

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১২:২৩ পিএম

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৩ পিএম

সুন্দরবনের কচিখালীতে একটি সাদা-বুক মাছরাঙা। ছবি : লেখক

সুন্দরবনের কচিখালীতে একটি সাদা-বুক মাছরাঙা। ছবি : লেখক

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার পথ অটোতে চড়ে রোদেলা বিকালে তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নের তুলসিয়া বিলে পৌঁছলাম। চমৎকার বিল। পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত। মাঝেমধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ ও জলজ উদ্ভিদ। বিলের পানি ছেয়ে আছে পানিকলা নামে এক ধরনের উদ্ভিদের সাদা ফুলে। অত্যন্ত সুন্দর লাগছে দেখতে। বিল ও ধানক্ষেত ছাড়িয়ে পেছনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে ভারতের দার্জিলিংয়ের কার্সিয়াং পাহাড়। তারও পেছনে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে বরফময় শ্বেতশুভ্র হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিল এ জীবনে কখনোই দেখিনি। 

বিল ও ধানক্ষেতজুড়ে প্রচুর আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটেছে। বিলের এক প্রান্তে বড় একটি গাছে পানকৌড়ি ও সাদা বকের ঝাঁক বসে আছে। বিলের ঠিক সামনে কাঁটাঝোপের মধ্যে লাল গলা বা তাইগা চটক (Red-throated Flycatcher) ও টুনটুনির (Tailor Bird) দেখা পেলাম। ধানক্ষেতের ধারঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ পরিযায়ী ধূসরমাথা হট্টিটি (Grey-headed Lapwing)। বিলের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে সরালিসহ (Lesser Whistling Duck) তিন প্রজাতির হাঁস ও ডুংকর বা জলমুরগি (Common Moorhen)। শাপলাপাতার ওপর হেঁটে বেড়াচ্ছে সুদর্শন জলপিপি (Bronze-winged Jacana)। শিকারের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কানিবক (Pond Heron) মাঝেমধ্যে তিলা (Western Spotted Dove) ও ধবল ঘুঘু (Eurasian Collared Dove)  আসা-যাওয়া করছে। 

বিলের মধ্যে একটি উঁচুমতো জায়গায় খড়ের স্তূপ রাখা আছে। স্তূপের ঠিক ওপরে নীল-খয়েরি-সাদা একটি পাখি বসে ছিল। হঠাৎই একই প্রজাতির আরেকটি পাখি এসে ওর পাশে বসল। মুহূর্তের মধ্যে কী হলো কে জানে? দুটির মধ্যে শুরু হলো তুমুল যুদ্ধ। দারুণ সে দৃশ্য! একটি আরেকটিকে এই ঠোকর মারছে তো আবার ধাওয়া করছে। অন্যটিও থেমে নেই, সমুচিত জবাব দিচ্ছে। যুদ্ধের পুরো চিত্র ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে উপভোগ  করলাম। আর শাটারে সমানে ক্লিক করে গেলাম। ছয় বছর আগের ঘটনা এটি।

মাত্র দুই দিন আগে, ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ভোরে, পাখিটিকে আকস্মিকভাবে এমন এক জায়গায় দেখলাম, যা ছিল আমার কল্পনারও অতীত। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে মাত্র ১০০ গজ গিয়েছি, অমনি পাখিটিকে দেখলাম সদ্য ভেঙে ফেলা একটি দালানের প্লটে। দালানটি ভেঙে বহুতল ফ্ল্যাট বানানো হচ্ছে। দালান ভাঙার কারণে প্লটটির এক কোণে একটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই গর্তে কিছুটা পানিও জমেছে। সম্ভবত সেই পানিতে কোনো ব্যাঙ বা বড় কীটপতঙ্গ থাকতে পারে। এত অল্প সময়ে তো আর মাছ আসতে পারবে না। আর তার খোঁজেই পাখিটির আকস্মাৎ আগমন। সঙ্গে ক্যামেরা ছিল না বলে ছবিটি তুলতে পারলাম না। তবে পাখিটিকে এখানে দেখে অত্যন্ত খুশি হয়েছি।

তুলসিয়া বিলের যুদ্ধবাজ এই পাখি দুটি এবং দুই দিন আগে আমার নিবাস জিগাতলায় দেখা পাখিটি এ দেশের বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি সাদা-বুক মাছরাঙা। সাদাগলা মাছরাঙা বা শুধু মাছরাঙা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম 

White-breasted Kingfisher, Eastern White-breasted Kingfisher ev White-throated Kingfisher| ˆeÁvwbK bvg Halcyon smyrnensis| বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্কে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্ক সাদা-বুক মাছরাঙার দৈর্ঘ্য ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার, প্রসারিত ডানা ৪০ থেকে ৪৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ৬৬ থেকে ৮১ গ্রাম। পিঠের রং নীল ও দেহতল চকলেট-বাদামি। গলা ও বুকের উপরিভাগ সাদা। মাথা, ঘাড় ও বুকের দুপাশ চকলেট-বাদামি। চঞ্চু লাল ও মুখের ভেতরটা কমলা-লাল। চোখ বাদামি। পা ও পায়ের পাতা প্রবাল-লাল। স্ত্রী-পুরুষে পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পালক অনুজ্জ্বল বাদামি, বুকে কালচে ঢেউ খেলানো দাগ ও চঞ্চু বাদামি। 

সাদা-বুক মাছরাঙা দেশজুড়ে বিভিন্ন ধরনের আবাসস্থলে দেখা যায়, এমনকি শহরেও। এরা বনের প্রান্ত, আবাদি জমি, বাগান, শুষ্ক পাতাঝরা বন, জলাভূমি, নদীনালা-খালবিল, উপকূল ও সুন্দরবনে বিচরণ করে। দিবাচর পাখিগুলো সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। গাছের ডালে, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারে বসে মাটি বা পানিতে শিকার পর্যবেক্ষণ করে। মাছ, ব্যাঙ, গিরগিটি, সাপ, ইঁদুর, পাখির ছানা, পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদি খায়। উড়ন্ত অবস্থায় উচ্চৈঃস্বরে ‘কে-কে-কেক-কেক—-’ বা ‘কিলিলি—-’ শব্দে ডাকে। 

মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। এ সময় নদী, খাল বা পুকুরপাড়ের খাড়া দেয়ালে সুড়ং খুঁড়ে বাসা বানায়। সুড়ং প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হতে পারে। স্ত্রী পাখি ৪-৭টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২০ থেকে ২২ দিনে। ছানারা ১৮ থেকে ২০ দিনে উড়তে শিখে। আয়ুষ্কাল ৩ থেকে ৪ বছর। 

লেখা ও আলোকচিত্র: পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা