কক্সবাজার অফিস
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩২ এএম
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করা মোহাম্মদ ইসহাক। তার দাবি, সন্তান হিসেবে স্বীকৃতির আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহীন আক্তার তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে সঙ্গে নিয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরানের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ইসহাক জানিয়েছেন, গত তিন বছর আগে দায়ের করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তার বাবা একজন সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। তার সৎমা শাহীন আক্তার বর্তমান সংসদ সদস্য। তারা উভয়ে প্রভাব খাটানোর কারণে আদালতে মামলাটির দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ফলে তিনি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। তাই জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন ও জনমত তৈরি করতে তিনি একই আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তবে সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি কোনো কথাই বলেননি। তিনি বলেছেন ‘নো নিড মিডিয়া’।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, গত ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার ২৭ বছর বয়সি যুবক মোহাম্মদ ইসহাক কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে নিজের বাবা দাবি করে টেকনাফের সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বদি ছাড়াও মূল-বিবাদী করা হয়েছে বদির আপন চাচা টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে। মামলাটি আদালতে এখনও বিচারাধীন।
মনোনয়নপত্র জমাদানকালে মোহাম্মদ ইসহাক সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে জয়-পরাজয় তার কাছে মুখ্য নয়, পিতৃত্বের স্বীকৃতি আদায়ের অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এবারের নির্বাচন তার কাছে পিতৃত্বের স্বীকৃতির সেন্টিমেন্টাল আন্দোলনেরই অংশ। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করানো যে, তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিরই সন্তান।
তিনি জোর দাবি করে বলেন, মামলা স্বাভাবিক গতি-প্রক্রিয়ায় এগোলে তিনি পিতৃত্বের স্বীকৃতি পাবেন। এ ছাড়া আদালতের আদেশে যদি তার ও বাবা বদির ডিএনএ টেস্ট করা হয়, তাহলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হবে।
আদালতে দায়ের করা মামলায় বলা হয়, গত ৩০ বছর আগে টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ ধুমপাড়ার বাসিন্দা আবুল বশরের মেয়ে সুফিয়া খাতুনকে সাবেক সংসদ সদস্য বদি গোপনে বিয়ে করেন। বাদী তার মায়ের পেটে আসার খবর জানতে পেরে তাকে পেটে থাকতে হত্যার চেষ্টা চালান বদি। তাতে সফল না হয়ে সুফিয়াকে স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় সুফিয়ার পেটে বাচ্চা থাকার কথা গোপন রাখা হয়। পরে জানতে পেরে সেই স্বামী সব মেনে নিয়ে সংসার করেন। এরপরও বাচ্চাসহ সুফিয়াকে হত্যার চেষ্টা করত বদির পরিবার। এজন্য তারা প্রায় সময়ই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পালিয়ে জীবনধারণ করে। এসব বিষয় উল্লেখ করে সুফিয়া সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তাদের দাবি, ইসহাক বদির সন্তান, তাকে যেন মেনে নিয়ে সন্তানের মর্যাদা দেওয়া হয়। বাদী ও তার মায়ের দাবি অনুসারে আব্দুর রহমান বদির প্রথম সন্তান ইসহাক।
বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা দায়ের ও জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, এ মামলাটি দায়ের করার পর বিবাদীকে নোটিস প্রদান করা হয়। কিন্তু ঠিকানা জটিলতার কারণে নোটিসটি বিবাদীর হাতে পৌঁছেনি। নোটিসপ্রাপ্তি না হওয়ার কারণে মামলাটি দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।