মাদারীপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৫১ পিএম
শিবচর থেকে মাত্র ৯০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছেছেন যাত্রীরা। প্রবা ফটো
অফিসের সময় ধরে প্রথমবার ট্রেনে উঠেই শিবচর থেকে মাত্র ৯০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকার কমলাপুর পৌঁছেছেন যাত্রীরা। শুধু শিবচর তথা মাদারীপুর জেলার যাত্রীরাই নয়, এই প্রথম ট্রেন যাত্রী হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছেন শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জের যাত্রীরাও। ট্রেনে প্রথমবার উঠার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত এসব জেলার মানুষ। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) স্টেশনগুলোতে ট্রেন সার্ভিস চালুর দৃশ্য দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করেন।
গত ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ১ নভেম্বর থেকে এ রুটে জনসাধারনের চলাচলের জন্য খুলনা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চালু করলেও এ দুটি ট্রেন ভাঙ্গার পর কোন স্টেশনে থামেনি। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন সার্ভিস চালুর ১ মাস ২০ দিন পর ১ ডিসেম্বর শুক্রবার থেকে মাদারীপুরের শিবচর, পদ্মা স্টেশন ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত এসব এলাকার মানুষ। এদিন খুলনা থেকে ছেড়ে সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে নকশীকাঁথা কমিউটার ট্রেনটি মাদারীপুরের শিবচর স্টেশনে এসে পৌঁছে। ২মিনিট বিরতি দিয়ে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ৮টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে ৯টা ৩ মিনিটে শিবচরের পদ্মা স্টেশনে আসে। সেখানে ক্রসিংয়ের কারণে ১২ মিনিট বিরতি দিয়ে ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ১০টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা পৌঁছায়। শিবচর স্টেশন থেকে ঢাকার ভাড়া ৯০ টাকা, ভাঙ্গার ভাড়া ২০ টাকা, ফরিদপুরের ২৫ টাকা, রাজবাড়ির ৪৫ টাকা, কুষ্টিয়ার ৬০ টাকা, যশোরের ১১৫ টাকা ও খুলনার ভাড়া ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ট্রেনটি ১১টা ৪০ মিনিটে আবারও ঢাকা থেকে একই স্টেশন ধরে খুলনা স্টেশন পর্যন্ত ছেড়ে যাবে। এদিন রাজশাহী থেকে ছেড়ে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে আন্তওনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি মাদারীপুরের শিবচর স্টেশনে আসে। ২ মিনিট বিরতি দিয়ে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ১টা ১৭ মিনিটে ছেড়ে ১টা ৩০ মিনিটে পদ্মা স্টেশনে আসে। এখানে ২ মিনিট বিরতি দিয়ে ১টা ৩২ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শিবচর স্টেশন থেকে ঢাকার ভাড়া ১৮৫ টাকা। ভাঙ্গার ভাড়া ৪৫ টাকা, ফরিদপুরের ৫০ টাকা, রাজবাড়ির ৮০ টাকা , ঈশ্বরদী ২০০ টাকা, রাজশাহীর ভাড়া ২৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ট্রেনটি দুপুর ৩টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে একই স্টেশনগুলো ধরে রাজশাহী স্টেশনে যাবে।
শিবচরের ট্রেন যাত্রী ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আজকের এই দৃশ্য আমাদের কাছে অকল্পনীয়। মাত্র ৯০ টাকায় ঢাকা যাচ্ছি প্রথমবারের মতো ট্রেনে। এই এলাকা ছিল খুবই অনুন্নত। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে পদ্মা সেতু ও রেল লাইন। সত্যি আমরা ভাগ্যবান।
রাজবাড়ি থেকে আসা যাত্রী কবির হোসেন বলেন, ‘১২০ টাকা ভাড়ায় রাজবাড়ি থেকে ঢাকা যাচ্ছি। সত্যি মিরাক্কল।’
নকশিকাথা ট্রেনের সহকারী ট্রেন চালক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ট্রেন সার্ভিসটি নিয়ে মানুষ যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। সত্যি তা দেখার মতো। এ এলাকার মানুষ এই ট্রেনে অফিস ও ক্লাশেও যেতে পারবে।’
শিবচরের স্টেশন মাস্টার মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘নকশিকাথা ট্রেনটি অফিস টাইমে হওয়ায় প্রথমদিন থেকেই চাপ বেশি। আজকের দুটো ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে নতুন ৩টি স্টেশন চালু হলো।’
মাওয়া স্টেশন মাস্টার মো. হাসানুর রহমান বলেন, ‘মাওয়া স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছানোর পর সবাই স্বাগত জানায়।’
মাওয়া-ভাঙ্গা রেল লাইন ট্রাক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ শওকত হোসেন বলে, ‘এ পর্যন্ত এ রুট দিয়ে ৪টি ট্রেন চালু হলো। যশোর পর্যন্ত লাইন হয়ে গেলে আরও অনেক ট্রেন এ রুটে সংযুক্ত হবে।’