× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনুমোদন নেই শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের

বরগুনা সংবাদদাতা

প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:০৭ পিএম

বরগুনা শহরে অনুমোদনহীন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রবা ফটো

বরগুনা শহরে অনুমোদনহীন একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রবা ফটো

বরগুনা জেলার বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসা-সংক্রান্ত নিয়মকানুন মানে না। তাদের অধিকাংশের নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন। নিয়ম মেনে না চলায় সেগুলোর লাইসেন্সও নবায়ন হচ্ছে না। এতকিছুর পরও এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।

বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, জেলায় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১০৭টি। এর মধ্যে শুধু জেলা সদরেই ৩৭টি। এ ছাড়া আমতলী উপজেলায় ১৯টি, বামনায় ১০টি, বেতাগীতে আটটি, পাথরঘাটায় ২৭টি এবং তালতলীতে ছয়টি ক্লিনিক আছে। এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বেশিরভাগ নিয়মকানুনই মেনে চলা হয় না। অধিকাংশেরই নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন। ১০৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মধ্যে ৪৬টির ছাড়পত্র বা লাইসেন্স নবায়ন নেই দুই থেকে ছয় বছর ধরে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯টি প্রতিষ্ঠান নবায়নের আবেদন করলেও তা এখনও রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তের অপেক্ষায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে এবং তদন্তের অপেক্ষায় আছে ২৩টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চারটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পেলেও তারা নতুন অর্থবছরের নবায়ন আবেদন করেনি। 

অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুটি নতুন আবেদন এবং দুটি অসম্পুর্ণ আবেদন রয়েছে। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক পরিচালনার ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন/আয়কর প্রত্যয়নপত্র, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরিবেশ ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তিপত্রসহ বেশকিছু কাগজপত্র এবং অবকাঠামোগত বিষয় থাকতে হয়। আর এসব না থাকার কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে না বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে দুয়েকটি ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

প্যাথলজিস্ট ছাড়াই টেস্ট

একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (প্যাথলজিস্ট), একজন করে রিপোর্ট প্রদানকারী, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকতে হয়। তবে ক্লিনিকের ক্ষেত্রে এর বাইরে সার্বক্ষণিক ডাক্তার, নার্সসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতি থাকা বাধ্যতামূলক।

ক্লিনিকগুলো ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জেলার ১০৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের কোথাও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (প্যাথলজিস্ট) নেই। নামমাত্র একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দিচ্ছেন। হাতে গোনা দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের রিপোর্টে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পাশাপাশি একজন মেডিকেল অফিসারের কাউন্টার স্বাক্ষর রাখলেও তাদের অনেকের ক্ষেত্রে মেডিকেল অফিসারের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করা হচ্ছে। কেননা কোনো মেডিকেল অফিসার সেখানে বসেন না।

বরগুনা জেলা শহরের শের-ই বাংলা সড়কের শরীফ এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এমন চিত্র ধরা পড়ে। পরিদর্শনকালে আলিফ নামের এক রোগীর পরীক্ষা রিপোর্টে দেখা যায়, আবুল হাশেম খান নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত এমবিবিএস ডাক্তারের নামের স্বাক্ষর। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাক্ষর ব্যবহারকারী ডাক্তারের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুল জলিল নামে এক কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসক এসে স্বাক্ষর করে চলে গেছেন। 

কিন্তু এরপর ওই প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার গিয়েও স্বাক্ষর প্রদানকারী চিকিৎসক আবুল হাশেমকে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায়, ওই ডাক্তার বয়সের কারণে কিছুটা শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে বেশিরভাগ সময় নিজ বাসায় অবস্থান করেন।

বরগুনা শহরের চরকোলনী এলাকার ওমি নামে এক নারী জানান, এ বছরের ১ জুন শহরের শরীফ এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজি সেন্টারে গিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালে সেখানে পজিটিভ আসে। কিন্তু এর ১৫ থেকে ২০ দিন পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করালে সে রিপোর্টে প্রেগন্যান্সির কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

ওমি বলেন, এ ধরনের ভুল রিপোর্ট আমরা কখনোই প্রত্যাশা করি না। কারণ প্রেগন্যান্সি না হওয়ার পরও যদি পজিটিভ আসতে পারে, তাহলে এদের কাছে প্রেগন্যান্সি হওয়ার পর নেগেটিভও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ভুল রিপোর্টের জন্য একটি জীবন চলে যেতে পারে।

এক রোগীর রক্তে কোলেস্টেরল পরীক্ষায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে তিন ধরনের ফলাফল এসেছে। তিনি কোন প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট দিয়ে চিকিৎসাসেবা নেবেন, তা বুঝতে পারছেন না।

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শরীফ এক্স-রে অ্যান্ড প্যাথলজির স্বত্বাধিকারী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক আছে। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার রি-এজেন্ট সঠিক না থাকার ফলে এমন ঘটনা হতে পারে।’

পাথরঘাটা উপজেলার বিসমিল্লাহ্ ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মো. রুবেল মিয়া নামে এক রোগীর এক্স-রে রিপোর্টে প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবেরুল ইসলাম চৌধুরী নামে এক চিকিৎসকের স্বাক্ষর। এ সময় ওই চিকিৎসকের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হারুন অর রশীদ জানান, তিনি (চিকিৎসক) ঢাকায় অবস্থান করেন এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে এক্স-রে রিপোর্ট দেখে স্বাক্ষর দেন।

ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মান নিয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘কোনো প্যাথলজি অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার রোগীর ভুল অথবা অনুমাননির্ভর পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করলে সব চিকিৎসাসেবাই ব্যাহত হয়। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। আর সেখানে ভুল হলে রোগীরা সুস্থতার পরিবর্তে মৃত্যুঝুঁকিতে চলে যেতে পারেন। তাই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা খুবই জরুরি।’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় অভিযানে ল্যাবের আয়তন এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ না থাকা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল না থাকার অভিযোগে পাথরঘাটার ১৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরে শর্তসাপেক্ষে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলেও এখনও বন্ধ আছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

তালতলী উপজেলার সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পরে শর্তসাপেক্ষে সেগুলো পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘সব নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করতে চাইলে জেলার একটিও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অথবা ক্লিনিক চালাতে পারবে না। তাই আমরা চেষ্টা করছি এগুলোকে যথাসম্ভব নিয়মনীতির মধ্যে রাখার।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের সতর্ক করা হবে। যদি তারপরও কোনো সংশোধন না হয়, তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা