নাব্যতা সংকট
সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৩ পিএম
পদ্মা নদীর নাব্যতা সংকটে অচল হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের গোপালপুর ঘাট। এ কারণে ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে হাজীডাঙ্গী গ্রামের বালুচরে যাত্রীদের ওঠা-নামা করা হয়। সম্প্রতি তোলা। প্রবা ফটো
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নাব্যতা হারিয়ে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম শুরুর পর থেকে গত ১৫ দিন ধরে পানি শুকিয়ে ওই ঘাটে লঞ্চ ও স্পিডবোট ভিড়তে পারছে না। ফলে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাগামী উপজেলার হাজারো লঞ্চযাত্রী নামানো হচ্ছে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের বালুচরে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ নৌরুটের যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর-মৈনাকঘাট দিয়ে আশপাশের পাঁচটি উপজেলার যাত্রীরা প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। এ নৌরুটের যাত্রীরা স্পিডবোট ও লঞ্চে খুব অল্প সময়ে পদ্মা নদী পার হয়ে ঢাকার দোহার উপজেলার মৈনাকঘাটে পৌঁছতে পারে। কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে উপজেলা পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাট পয়েন্টে চর পড়ে নৌযান চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর দিকের উজানে পদ্মা নদীর হাজীডাঙ্গী গ্রামের বালুচরে যাত্রীদের ওঠা-নামা করানো হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ রুটে চলাচলরত যাত্রী সাধারণকে। এ ছাড়া যাত্রী কম হওয়ায় প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে লঞ্চমালিকসহ ঘাট ইজারাদারের।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ঘাট থেকে পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে চর পড়েছে। ফলে এ ঘাটে লঞ্চ ভিড়তে না পেরে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তর দিকের উজানে পদ্মা নদীর হাজীডাঙ্গী গ্রামের বালুচরে ভিড়েছে। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী-শিশুসহ প্রবীণরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তা ছাড়া ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে আসা যাত্রীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।
ঢাকা থেকে আসা মারুফা আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘নাব্যতা সংকটে মৈনাকঘাট থেকে লঞ্চে উঠে পদ্মা নদী পার হতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময় লাগার পরও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে দেড় কিলোমিটার দূরের বালুচরে। সঙ্গে দুটি শিশুসন্তান ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে উপজেলার প্রধান সড়কে পৌঁছতে খুবই কষ্ট হয়েছে।’
জব্বার ফকির নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘এ নৌরুটের যাত্রীরা গত ১৫ দিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুধু শুনতেছি গোপালপুর ঘাটের কিছু অংশে নৌচলাচলের জন্য ড্রেজিং কাজ শুরু হবে, কিন্তু কাজ তো শুরুই হচ্ছে না।’ লঞ্চযাত্রীদের মতো একই কথা বললেন বিভিন্ন স্পিডবোটে আসা যাত্রীরাও। তাদেরও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
গোপালপুর ঘাটের টিকিট মাস্টার মোকসেদুর রহমান বলেন, ‘ঘাটটি ড্রেজিং না করায় যাত্রীসংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনছি।’ যাত্রী কম হওয়ায় লঞ্চমালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান কয়েকটি লঞ্চের স্টাফরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী মোর্শেদ বলেন, ‘আপাতত লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলের জন্য পদ্মা নদীর গোপালপুর ঘাটে ড্রেজিং করে একটি ক্যানেল করা হবে। ওই নৌরুটটি সচল রাখতে শিগগির বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করবে।’
জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি গত ২ নভেম্বর ঊর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই খনন কাজের জন্য সংশ্লিষ্টরা গোপালপুর ঘাট পরিদর্শন করবেন। যত দ্রুত সম্ভব খনন কাজ শুরু করা হবে।’