মৎস্য কর্মকর্তার মামলা
ফেনী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৪০ পিএম
বড় ফেনী নদী থেকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান শেষে ফেরার পথে ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সোনাগাজী উপজেলার চর খোন্দকার জেলেপাড়া। গত ২৩ নভেম্বর সোনাগাজী-মুহুরী প্রকল্প সড়কের শাহাপুর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় কৃষ্ণ মোহন জলদাস নামে এক জেলেকে আটক করা হলেও সমঝোতার মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে জেলেরা ভুল স্বীকার করায় মামলা না করার ঘোষণা দিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মৎস্য কর্মকর্তা।
কিন্তু ঘটনার চার দিন পর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে গোপনে জেলে সর্দার প্রিয় লাল জলদাস, রাধেশ্যাম জলদাস, কৃষ্ণ মোহন জলদাসসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। প্রথমে বিষয়টি জানাজানি না হলেও ৩০ নভেম্বর দুপুরে জেলেপাড়ায় পুলিশ গেলে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকে পুরো জেলেপাড়া পুরুষশূন্য হয়ে গেছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৩ নভেম্বর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে জাটকা সংরক্ষণ ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে বড় ফেনী নদীতে অভিযান চালান। অভিযানে নদীতে দুটি নিষিদ্ধ বেহেন্তি জাল অপসারণ করা হয়। এ সময় জেলেরা অভিযানে বাধা দেয়। একপর্যায়ে জেলেদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের কথাকাটাকাটি হয়। পরে মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযান শেষ করে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে শাহাপুর বাজার এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে শতাধিক জেলে একত্র হয়ে লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং মৎস্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা চালান। এতে তার গাড়ির পেছনের ও ডান পাশের কাচ ভেঙে যায়। তারা কর্মকর্তাদেরও লাঞ্ছিত করেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান, সরকারি কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
মামলার প্রধান আসামি জেলে সর্দার প্রিয় লাল জানান, তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। এক জেলেকে আটকের খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন। ঘটনার রাতে থানায় ইউএনও, ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে মামলা করবেন না বলে মৎস্য কর্মকর্তারা একটি জিডি করেন। পরে থানা থেকে আটক জেলেকে তারা ছাড়িয়ে নেন।
অপর আসামি রাধেশ্যাম জলদাস জানান, হঠাৎ করে মামলার খবরে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে বাধ্য হয়ে নদীসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যেতে হচ্ছে।
পুরবী রানী জলদাস নামে এক নারী বলেন, ‘মাছ ধরে আমাদের জীবিকা চলে। মৎস্য কর্মকর্তার মামলার ভয়ে পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এতে করে মাছ না ধরতে পারায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় পুরো জেলেপাড়া পুরুষশূন্য হয়ে যায়।’
জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হাসান ইমাম বলেন, ‘থানায় মামলা হলেও উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে জেলেদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। তাদের নিয়ম অনুযায়ী আদালত থেকে জামিন নিতে বলা হয়েছে।’