ইমরান হোসেন মনিম, রাজবাড়ী
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪২ পিএম
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৪ পিএম
রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যা উন্নীতকরণ হলেও পাঁচ বছরেও হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শেষ না হওয়ায় সদর হাসপাতালের পুরোনো ভবনেই প্রতিদিন গাদাগাদি করে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা।
রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় প্রায় ১৫ লাখ লোকের বসবাস। বিশাল জনসংখ্যার জন্য রাজবাড়ী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেবাপ্রার্থীদের।
জেলা সদরসহ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও জটিল রোগীদের ছুটতে হয় ফরিদপুর অথবা ঢাকায়। এতে চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বাড়তি খরচে বিপাকে পড়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। ফলে হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবনটির কাজ দ্রুত শেষ করে ২৫০ শয্যার সেবা চালুর দাবি স্থানীয় জনগণের।
রাজবাড়ীর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ রাজবাড়ী ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। নিচতলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত প্রথম পর্যায় এবং সপ্তম থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজটি বাস্তবায়ন করছে সালাম কনস্ট্রাকশন ও জিকেবিপিএল নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন নতুন ভবনে চারটি লিফটসহ রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য থাকবে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও পর পর তিনবার সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত গড়িয়েছে। করোনা মহামারি, ভবনের ডিজাইন পরিবর্তন, লিফ্টসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ না হওয়ায় ৫ বছরে তিনবার সময় বাড়িয়েও ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে পুরোনো ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালই স্থানীয়দের শেষ ভরসা। যেখানে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। ফলে আউটডোর রোগীর চাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হিমশিম খেতে হয় রোগীদের।
সম্প্রতি কথা হয় হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ফজলুল হকের সঙ্গে। এ সময় তিনি শতাধিক সেবাপ্রার্থীর পেছনের সিরিয়ালে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘসময় অপেক্ষারত ফজলুল হক জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এভাবে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার মতো শত শত রোগীকে প্রতিদিনই এভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
আরেক রোগী সেলিনা বেগম জানান, তিনি দুই দিন ধরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে রোগীর চাপে বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন হাসপাতালের কাজ শেষ না হওয়ায় সদর হাসপাতালে কোনো সু-চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসক স্বল্পতায় শত শত রোগীর চাপে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের আউটডোরে টিকিট কেটে রোগী দেখানো যেন যুদ্ধজয়ের সমান। প্রতিটি চিকিৎসক রুমের সামনে প্রচুর ভিড় থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। দীর্ঘসময় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে চিকিৎসক দেখাতে রোগীসহ তাদের অনেক কষ্ট হয়। আবার চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের লম্বা লাইন থাকায় কোনো রকম দেখেই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই দ্রুত ২৫০ শয্যার সেবা চালুর দাবি জানিয়েছে তারা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘১০০ বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিন ২৫০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি থাকছে ১০০ বেডের হাসপাতালটিতে। এতে সেবাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে নতুন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন ভবনে এখনও লিফটসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ভবন হ্যান্ডওভার নিতে দেরি হচ্ছে। পুরো ভবন চালু হলে ওয়ার্ড ও চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়বে। এতে রোগীদের সেবাদান কার্যক্রম ভালো হবে।’
রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদ কবির বলেন, ‘সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। বিভিন্ন কারণে কাজের গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পুরোদমে চলছে কাজ। আগামী জুন মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে ভবনটি।’