গাজীপুরে রেললাইনে ‘নাশকতা’
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৭ পিএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৩ পিএম
গাজীপুর ট্রেন দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজ চলছে। প্রবা ফটো
গাজীপুরের বখড়িয়া (চিলাই ব্রিজ) এলাকায় দুর্বৃত্তদের কেটে ফেলা রেললাইনে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনটি প্রায় অর্ধেক লাইনচ্যুত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে। বেঁচে গেছে ট্রেনে থাকা শত শত যাত্রী। ট্রেনের গতি বেশি থাকলে ঘটতে পারত বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনায় মারা গেছে মুরগি ব্যবসী মো. আসলাম। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
এ ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। আহতরা হলেন, গফরগাঁও উপজেলার লাজাল উদ্দিনের ছেলে রফিকুল মোল্লা, একই উপজেলার সফিক মিয়ার স্ত্রী জামিনা, কুমিল্লার জসিম উদ্দিনের মেয়ে সুরভী, গৌতম সাহার স্ত্রী রুপালি সাহা, মনির উদ্দিনের ছেলে বেলাল উদ্দিন, জসিম উদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা, নিজাম উদ্দিনের ছেলে জলিল, লালু মিয়ার ভহেলে সুমন, কুদ্দুসের ছেলে সবুজ,
নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম জানান, রাত ১১টার দিকে মোহনগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। তিনি ওই ট্রেনে স্ত্রীকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা আসছিলেন। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেলস্টেশন পার হওয়ার পরই বিকট শব্দে ট্রেনটি কাত হয়ে পড়ে। পেছনের দিকে বগিতে ছিলেন। তখন রাত আনুমানিক সোয়া ৪টা বা সাড়ে ৪টা বাজে। এ সময় যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে বুঝতে পারেন ট্রেনে কিছু একটা হয়েছে। পরে জানতে পারেন লাইন থেকে ট্রেনের ইঞ্জিন পড়ে গেছে।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তিনি ইঞ্জিনের পরের বগিতেই ছিলেন। ঘন কুয়াশা থাকায় ট্রেন ধীর গতিতে চলছিল। তিনি ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ হলে তার ঘুম ভাঙে। তখন দেখতে পান কয়েকটি বগি লাইন থেকে নিচু জমিতে পড়ে রয়েছে। অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে তিনিও অনেক কষ্টে জানালা দিয়ে বের হয়ে জীবন বাঁচান।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ধীরগতি থাকায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। যদি ট্রেনের গতি থাকত, তাহলে ঘটতে পারত বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কারণ ট্রেনটিতে ছিল শত শত যাত্রী। ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যাত্রীদের তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। এ ঘটনায় মারা গেছে একজন। তবে সবার মুখে মুখে শুনছি ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছে। নিহত আসলাম ইঞ্জিনের সঙ্গে থাকা বগির মাঝখানে বসেছিলেন। ট্রেন পড়ে গেলে তিনিও পড়ে মারা গেছেন।’
অপর নারী যাত্রী কুলছুম আক্তার বলেন, ‘মানুষ কীভাবে কাজটি করল। কীভাবে ট্রেনলাইন কেটে রাখল তারা। এটা কীভাবে সম্ভব। এ ঘটনায় আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত। যারা এ কাজ করেছে তাদের কী আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা ও ভাই-বোন নেই। তাদেরও তো স্বজনেরা এ ট্রেনে থাকতে পারত। তাদের আল্লাহ তুমি রহম করো।’
এদিকে গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ-ঢাকা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢাকা থেকে চলাচল করতে পারে সেজন্য রুট পরিবর্তনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের ট্রেনগুলো ঢাকা-বিমানবন্দর-টঙ্গী-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচল করছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইনচার্জ আবু ফজল জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও আহত ১১ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে চারজন, সাতজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর রলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. হানিফ আলী বলেন, ‘নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে রাত ১১টায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে আসে। ময়মনসিংহ স্টেশন অতিক্রম করে রাত ২টার দিকে। ওই ট্রেনে প্রায় তিনশত যাত্রী ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’