নীলফামারী প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৫২ এএম
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১৬ এএম
ডোমারে রেললাইনের ৭২টি ফিসপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রবা ফটো
নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিসপ্লেট ক্লিপ খুলে নাশকতার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে এলাকাবাসীর প্রতিরোধে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বাগডোকরা প্রধানপাড়া দোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে দেখতে পাই রেললাইনের প্রায় ৭২টি ফিসপ্লেট খোলা হয়েছে। আমাদের ডোমারের ওপর দিয়ে রেললাইনের একটি বড় অংশ গেছে, আমরা সরকারকে অবহিত করব, যাতে যে স্থান দিয়ে রেললাইন গেছে সে স্থানের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ ছাড়া আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। তারা আমাদের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা চাইবেন আমরা তাদের সে ধরনের সহযোগিতা প্রদান করব।
সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের গার্ড হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখানে আসার পর এলাকাবাসী আমাদের ট্রেন দাঁড় করায়। তারপর তারা আমাদের বলে যে রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে রাখা আছে। যারা এগুলো খুলেছিল তাদের তারা ধরতে পারেনি কিন্তু তাদের ধাওয়া দিয়েছিল। এখানে লাইনের যারা কাজ করে তারা কিছু কাজ করে দেওয়ার পর আমরা চলাচলের অনুমতি পাই। তবে আমাদের এখন সর্তকর্তার সঙ্গে ধীরে ধীরে ট্রেন চালাতে হবে।
এলাকাবাসী জানায়, বুধবার রাতে ওই এলাকায় রেললাইনের লোহা খোলার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। এগিয়ে গিয়ে একদল দুর্বৃত্তকে রেললাইনের ফিসপ্লেট ক্লিপ খুলতে দেখা গেলে লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে ধাওয়া করে। এ সময় পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় বাসিন্দা হরিদাস চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনার পর চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে ৩০০ থেকে ৪০০ লোকজন উপস্থিত ছিল। তারা সবাই বিভিন্নভাবে সংকেত দিতে থাকলে ট্রেনটি থেমে যায়। এতে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। ওই সময় ট্রেনটিতে আড়াইশ যাত্রী থাকলেও দুর্ঘটনা ঘটেনি।
বোড়াগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিমন বলেন, এলাকাবাসীর ধাওয়ায় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে তাদের ফেলে যাওয়া একটি বস্তা থেকে ৭২টি ফিসপ্লেট ক্লিপ উদ্ধার হয়। এরপর রেলের লোকজন এসে লাইন মেরামত করলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
জোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখওয়াৎ হাবীব বাবু বলেন, ঘটনাটি আমার ইউনিয়নের সীমানায় ঘটেছে। আমি গিয়ে রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে ফিসপ্লেট ক্লিপ খোলা দেখতে পেয়েছি। এলাকাবাসীর সচেতনতায় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ট্রেনটি।
নীলফামারী স্টেশনমাস্টার ওবায়দুর রহমান রতন বলেন, লাইন মেরামতের প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ট্রেনটি সেখান থেকে ছেড়ে আসে। অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বরেন্দ্র একপ্রেস ট্রেনটিও দেড় ঘণ্টা আটকা পড়ে ডোমার স্টেশনে।
সৈয়দপুর রেলপথের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রেললাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করি।
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ চৌধুরি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।
এর আগে বুধবার গাজীপুরের ভাওয়ালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের একটি অংশ কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ওই পথে যাওয়ার সময় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এ ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১০-১২ জন।