× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্যের কালিজিরা ধান

এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৫৫ এএম

কালিজিরা ধান ক্ষেতে কৃষক মহিউদ্দিন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার তারিকাটা গ্রাম থেকে তোলা ছবি। প্রবা ফটো

কালিজিরা ধান ক্ষেতে কৃষক মহিউদ্দিন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার তারিকাটা গ্রাম থেকে তোলা ছবি। প্রবা ফটো

সুগন্ধি চিকন চাল। বিশেষ অনুষ্ঠানে যা দিয়ে তৈরি হতো পিঠাপুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি, জর্দাসহ আরও নানা রকম সুস্বাদু মুখরোচক খাবার। কিন্তু এসবই এখন স্মৃতি হতে বসেছে। এই ধান কাটার সময়কে ঘিরে গ্রামবাংলায় মেতে উঠত নবান্নের উৎসব। সেসব এখন অনেকটা অতীত। বীজের অভাব, সার, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে সুগন্ধি কালোজিরার চাষাবাদ। ২৫-৩০ বছরের ব্যবধানে এ ধানের জায়গা দখল করে নিয়েছে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একসময় দেশীয় জাতের সুগন্ধি কালোজিরার চাষ হতো কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে। ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব এমন হাজারো জাতের দেশি ধান। এখন বিক্ষিপ্তভাবে অল্প পরিমাণে এর চাষ হয়। কলাপাড়া কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ৩৫ হাজার ৫০০ কৃষক পরিবার রয়েছে। এ বছর ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে কালোজিরা ধান চাষ হয়েছে ৫০ হেক্টর জমিতে।

কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ জাতের ধান আগে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চাষ করা হতো। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষকরা বীজ আমদানির ওপর নিভর্রশীল হয়ে পড়েন। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের জনপ্রিয় কালোজিরা দেশি ধান। উপজেলার বৌলতলী গ্রামের কৃষক বজলু মিয়া বলেন, ‘গুয়া ধানের (কালিজিরা) ভাত রান্না করলে ম-ম গন্ধে চারদিক ভইরা যাইত। এই ভাত এমনি এমনিই খাওয়া যাইত। গুয়া ধানের ভাতের স্বাদের কথা জীবনেও ভুলতে পারন না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ধুলাসার, নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ ইউনিয়নে কালিজিরা ধান চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, এই জাতের ধানের ফলন হয় কম। বিঘাপ্রতি অন্য জাতের ধান যেখানে ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ উৎপন্ন হয় সেখানে এই জাতের ফলন হয় সর্বোচ্চ ৮ মণ পর্যন্ত। তবে বাজারে দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। সার, সেচ, পরিচর্যাও লাগে কম। সে হিসাবে আবাদে লোকসান হয় না বললেও চলে। এখনও গ্রামের গৃহস্থ পরিবারের কাছে এই ধানের কদর যথেষ্ট। এখনও প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

কালোজিরা জাতের চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ করা গেলেও বীজের অভাবে অনেকের পক্ষে আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তারা জানান। ধানক্ষেত দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এ যেন কোনো চিত্রশিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ছবি। এই জাতের ধান সাধারণত কালো বর্ণের হয়। অন্য ধানের চেয়ে এর আকারও ছোট।

গ্রামীণ জীবনে এই ধান ছিল অপরিহার্য। যেহেতু পিঠাপুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষির, পায়েস, ফিরনি, জর্দাসহ ইত্যাদি তৈরিতে এই ধানই ছিল সবার কাছে আকর্ষণীয়। এ ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন পূজা-পার্বণের ভোগ, মিষ্টান্ন রান্নার কাজে কালিজিরা চাল ব্যবহার করতেন। কিন্তু এসব এখন কালের স্মৃতি। উপজেলার ১৫টি ছোট-বড় হাটবাজার ঘুরে এই চাল সহজে পাওয়া যায় না।

হোসন মিয়া নামে একজন কৃষক জানান, ১৫ বছর আগে আমন চাষের পাশাপাশি কালিজিরা চাষও করতেন। কিন্তু খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় এই চাষ এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে মাত্র ৪ শতক জমিতে এই ধানের চাষ করছেন বলে তিনি জানান।

উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের কৃষক মহিউদ্দিন খাঁ বলেন, একসময় প্রত্যেক চাষিই কমবেশি এই ধান চাষ করতেন। আজ থেকে ২০ বছর আগেও অনেক কৃষক কালিজিরা ধান চাষ করতেন। এখন হাতে গোনা কিছু কৃষক নিজেদের খাবার জন্য কিছু জমিতে কালিজিরা ধান চাষ করেন। আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই ধানের ফলন অন্য ধানের চেয়ে অনেক কম। যে জমিতে আমন চাষ করে ৫ টন ধান পাওয়া যায় সে জমিতে কালিজিরা ৩ টনও পাওয়া যায় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কালিজিরার ফলন তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকরা এই ধান আবাদে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শুধু কৃষকের প্রয়োজনে যতটুকু লাগে এখন ততটুকু চাষাবাদ করেন তারা। বাণিজ্যিকভাবে কোনো কৃষক চাষাবাদ করেন না। খরচ বেশি ও লাভ কম হওয়ায় কৃষকরা এই ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা