প্রতিবেদক, ঢাকা, নোয়াখালী ও সোনাগাজী (ফেনী)
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৩ এএম
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে কোলাকুলি করেন নিজাম হাজারী ও রহিম উল্যাহ। প্রবা ফটো
দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে শরিক দলের প্রার্থীকে পরাজিত করতে একাট্টা হয়েছিলেন তারা। এই দুই প্রভাবশালী নেতার সুসম্পর্কের সুবাদে দলের নেতাকে ফেনী-৩ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে পায় আওয়ামী লীগ। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক এই কূটকৌশল আর কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। কারণ বিবাদ-কোন্দল-হামলা-মামলার জেরে ঘনিষ্ঠতা ভেঙে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছিল প্রভাবশালী ওই দুই নেতার। এই সুযোগে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। এবার অবশ্য পুরোনো সেই মারপ্যাঁচে লাঙ্গল প্রার্থীকে ফেলতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এ জন্য কৌশলের অংশ হিসেবে বিবদমান দুই নেতাকে মিলিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। অতীত ভুলে তারাও বুক মিলিয়েছেন, প্রতিজ্ঞা করেছেন আসন পুনরুদ্ধারে।
প্রভাবশালী ওই নেতা হলেন ফেনী-২ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহ। গত শুক্রবার রাতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে তাদের দীর্ঘ আট বছরের বিরোধের অবসান হয়। নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে নিজাম হাজারী ও রহিম উল্যাহ নোয়াখালী যান। কোম্পানীগঞ্জে প্রচার শেষে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিরোধ মিটিয়ে দলীয় কাজ করার আহ্বান জানালে তারা সাড়া দিয়ে কোলাকুলি করেন।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান যুবলীগ নেতা আবুল বাশার। তবে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিলে সেখানে জাতীয় পার্টি রিন্টু আনোয়ারকে মনোনয়ন দেন। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন জেদ্দা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজী রহিম উল্যাহ। ওই নির্বাচনে নিজাম হাজারী দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। ফলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যান রহিম উল্যাহ।
এক বছর সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলেও ২০১৫ সালে ফেনী সার্কিট হাউসে ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে নিজাম হাজারীর সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হন রহিম উল্যাহ। সেই ঘটনার জেরে দুই এমপির সমর্থকদের মধ্যে বহুবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়ের বহু সমর্থক আহত ও একজন নিহত হয়। পাল্টাপাল্টি মামলা হয় অন্তত তিন ডজন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এই নির্বাচনে অংশই নেননি রহিম উল্যাহ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসন আওয়ামী লীগ ফের জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে। নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের রহিম উল্যাহ।
প্রচারের শুরুতে কেন্দ্রের নির্দেশনা নেই বলে মাসুদ চৌধুরীকে সমর্থন করেনি এমপি নিজাম হাজারী। সম্প্রতি সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় লাঙ্গলের প্রার্থীকে সমর্থন জানান তিনি। এতেই নিজাম হাজারী ও রহিম উল্যাহর পুরাতন দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দলের শীর্ষ নেতার বাড়িতে বিরোধ মিটে যাওয়াতে দুই নেতার সমর্থক-অনুসারীদের মধ্যেও স্বস্তি নেমে এসেছে।
বিষয়টি স্বীকার করে রহিম উল্যাহ বলেন, ওবায়দুল কাদের দ্বন্দ্ব ভুলে মিলেমিশে কাজ করার আহ্বান জানালে আমরা কোলাকুলি করে বিরোধের অবসান করি।
ভোট চেয়ে গণসংযোগে ওবায়দুল কাদের
নোয়াখালী-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের শান্তির হাট, রংমালা বাজার, নতুন বাজার, বাংলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন তিনি।
মুছাপুরের বাংলাবাজারে গণসংযোগের সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি কিছুই চাই না। শুধু চাই ৭ তারিখ ভোটকেন্দ্রে এসে আপনার মূল্যবান ভোট দেবেন। মরেই গেছিলাম আপনাদের দোয়ায় ফিরে এসেছি। এখানে সম্মান পাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী সম্মান দিচ্ছেন। ১৬ বছর ধরে মন্ত্রী রেখেছেন, তিনবার সাধারণ সম্পাদক করেছেন। আপনারা যদি আমাকে প্রতিদান দেন, তাহলে সম্মানের জায়গাটা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর গত শুক্রবার প্রথম নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসেন তিনি। গতকাল সকালে গণসংযোগ শেষে বিকালে কবিরহাটে পথসভায় বক্তব্য রাখেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, অক্টোবরের ২৮ তারিখে নয়া পল্টনের রাস্তা থেকে পালিয়ে গেল, তাদের এক দফা গেল কোথায়? কোথায় গেল ৫৪ দল? কোথায় গেল ৩২ দফা? বিএনপি হচ্ছে একটি ভুয়া দল।
তিনি আরও বলেন, এরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ মানে না, স্বাধীনতা মানে না, একুশে আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড মেরেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যদি রক্ষা করতে হয়, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে হয়; তাহলে ক্ষমতার মঞ্চে আমরা শেখ হাসিনাকে আবারও চাই। বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই।