মীর ফাহাদ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:২৫ পিএম
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:২৮ পিএম
মাঠজুড়ে যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। প্রবা ফটো
কদিন আগে যেখানে ছিল খোলা প্রান্তর আর বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, সেখানে এখন হলুদের সমারোহ। মাঠজুড়ে যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলের রঙে অপরূপ রূপে প্রকৃতি সেজেছে হলুদ সমারোহে। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এখন গ্রামীণ জনপদগুলোয়। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার অধিকাংশ ক্ষেতের দৃশ্যই এখন এমন। চোখের জন্য আরামদায়ক দৃশ্যই বটে। আবার যেটি থেকে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।
আমন ধান ঘরে তোলার পর বাড়তি আয়ের জন্য এ সময়ে সরিষার চাষ করে থাকেন কৃষকেরা। বোরো ও আমন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে দুই ফসলি জমিকে তিন বা চার ফসলি করে তুলছেন তারা। বাজার দর ভালো থাকায় সরিষা চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে উপজেলার সরিষা চাষিদের মধ্যে। চাষের সময় এবং খরচ দুটোই কম হওয়ায় এটি চাষ করছেন কৃষকেরা। অনেকে আবার শাকের জন্য এটি চাষ করেন। এ ছাড়া তেল ও খৈল পাওয়া যায় সরিষা থেকে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে এ শস্যটির ফলন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এখন বাড়ছে সরিষার চাষ। এ ফসলের বিভিন্ন জাত রয়েছে যেমন- বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৯, টরি-৭ নামে দেশি সরিষার জাত বলে পরিচিতি। সরিষা বাড়তি অর্থকরী ফসল এ কারণে চাষিরাও আগ্রহী হচ্ছেন সরিষা চাষে।
এ বছর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় মোট ৭৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে। যেখানে গত বছর সরিষা চাষ হয়েছিল ২৩০ হেক্টর জমিতে। এ বছর ফলনের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেশি।
কৃষক আবেদ আলী জানান, ‘আমন ধান কাটার পর আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে পতিত জমিতে সরিষা বপন করি। সরিষা তোলার পর বোরো ধান করব। এটা করে আমি খুব লাভবান হয়েছি।’ কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরেই সরিষা চাষাবাদ করে আসছি। এ বছরও ২ বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ও সরিষাতে পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
ভালুকা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরিষা তেলের চাহিদা মেটাতে এবং এর উপকারিতা কৃষকদের বোঝাতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। আমন কাটার পরে যে জমিগুলো পতিত থাকত সেটি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। এরপর সরকারি সহায়তায় কৃষকদের বীজ ও সার দিয়েছি। তাতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। প্রচুর পরিমাণে সরিষা চাষ হয়েছে এবার। সরিষা কর্তনের পরে তারা আবার সময়মতো বোরো ধান করতে পারবে। মাঝখানে কৃষকরা বাড়তি একটি ফসল পেল।’
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘বোরো ধান রোপণের আগে সরিষা একটি বাড়তি অর্থকরী ফসল। চাষের সময় ও খরচ দুটোই কম হওয়ায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় সরিষা চাষ। সরিষা চাষ করতে সঠিক সময়ে সরকারি উদ্যোগে ২ হাজার কৃষকের মাঝে সার ও বীজ প্রণোদনা দিয়েছি আমরা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা নিজ উদ্যোগেও সরিষা চাষ করছেন। আশা করি, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’