সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:২৮ এএম
ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ-পাথর দেবে গিয়ে উঁচুনিচু হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্তের। প্রবা ফটো
ঢাকার সাভারের ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের যথাযথ সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পিচ-পাথর দেবে গিয়ে উঁচুনিচু হয়ে উঠেছে সড়ক। মহাসড়কের কিছু জায়গায় রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত। এর কারণে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত ও মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন যানবাহনও চালাতে হচ্ছে ধীরগতিতে। গত আগস্ট মাসেও গর্তে চাকা আটকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলের দুই আরোহীর মৃত্যু ঘটে। বড় দুর্ঘটনা এড়াতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবহারকারীরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে উদ্বোধন হয় নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ১৬ কিলোমিটার। ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন মহাসড়কটির উত্তরের ৩৪ জেলার সঙ্গে যাতায়াত সহজ করে। এ ছাড়া আমিনবাজার থেকে শুরু হয়ে ধামরাইয়ের গোলাড়া পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটারও সংস্কার করা হয়। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। এদিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চারলেনে উন্নীতকরণের পর থেকে কমেছে দুর্ঘটনা। তবে বেড়েছে ভোগান্তি ও যানজট। শুধু তাই নয় মহাসড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা। সংগত কারণেই এই সড়কে চলাচল করছে গণপরিবহনের পাশাপাশি ২৫ হাজারের বেশি ছোটবড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। দুটি মহাসড়কের গত চার বছরে বিভিন্ন দপ্তরের হিসাবে ছোট-বড় প্রায় এক হাজারের বেশি দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় মৃত্যু শতক পার হলেও আহতের সংখ্যা অসংখ্য।
সরেজমিনে ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, হেমায়েতপুর, ফুলবাড়িয়া, ডেইরিগেট, বিশমাইল, নিরিবিলি, ঢুলিভিটা, ইপিজেড, চক্রবর্তী, মোজারমেইল, জিরানী, কবিরপুর, বাড়ইপাড়া এলাকায় সড়কের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য টিউমার আকৃতি। মহাসড়কের দুপাশে পাথর ও পিচ দেবে গিয়ে পাশে ২ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত স্থান উঁচু হয়ে গেছে। এসব এলাকায় মাঝে মাঝে পেছনে আসা দ্রুত গতির গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে এ উঁচু ঢিবির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া ডিভাইডারের পাশে জমাট বেঁধে আছে পিচ ঢালাই। আবার পিচ সরে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় তৈরি হয় যানজটেরও।
আনোয়ার হোসেন নামের একজন ট্রাকচালক বলেন, ‘দিনের বেলাতে কিছুটা চোখে দেখা গেলেও রাতে ভয়ানক হয়ে ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে গাড়ির গতি কমিয়ে দিতে হয়। এতে পিছনে থাকা গাড়ির গতিও কমে গিয়ে তৈরি হয় যানজট। মহাসড়ক দুটি উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে যুক্ত থাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য সহজ। এই সড়কে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন বেশি চলে। বিষয়গুলো সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা থাকা দরকার। বিষয়গুলো অবহেলার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে।’
ডিইপিজেড এলাকার একটি তৈরি পোশাককারখানায় কর্মরত হাসিবুল সাফিন। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের এই উঁচু-নিচু স্থানের জন্য বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। সম্প্রতি মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফিরেছি। গত জুনে রাতে বাড়ি ফেরার পথে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের মোজাইরমেইল এলাকা গর্তে চাকা আটকে যায়। এতে পেছন থেকে অন্য একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। আহত হয়ে তিন মাস চিকিৎসাধীন ছিলাম।’
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের ধামরাই উপজেলার সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছে। তারা বিষয়গুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার আগের স্থানেই উঁচুনিচু হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এই মহাসড়কের অধিকাংশ যানবাহন ভারী ও দূরপাল্লার। সেই গাড়ি চলাচলের জন্য দরকার ভালোমানের বিটুমিন। মুখোমুখি সংঘর্ষ না হলেও সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সড়কে মৃত্যুও।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শফিক উর রহমান বলেন, ‘দেশের আবাহাওয়া ও যানবাহনের ধরন অনুযায়ী এই সমস্যাগুলো স্বাভাবিক। তবে সেই বিষয়ে কিন্তু যথাযথ ও প্রতিনিয়ত সংস্কারের মধ্যে রাখতে হবে। সংস্কারে অবহেলা করা যাবে না। উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য পিচ ঢালাইয়ের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
মহাসড়কগুলোর দায়িত্বে থাকা মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের উপ-প্রকৌশলী দেবাশীষ রায় বলেন, ‘যানবাহনের পরিমাণ ও ওজন বিশ্লেষণ করে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। তবে আমাদের কোনো যন্ত্র না থাকায় গাড়ির সঠিক ওজন মাপা যায় না। এ ছাড়া গাড়ির নির্দিষ্ট ওজনের থেকে বেশি পণ্য পরিবহন করে। এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব বিষয়ে অবগত রয়েছি। এজন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত স্থায়ী সমাধান হবে।’