× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৯ পিএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪০ পিএম

মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ওরফে মোশা। প্রবা ফটো

মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ওরফে মোশা। প্রবা ফটো

রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়ায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।  শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে মোশা বাহিনীর ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 

জানা গেছে, রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশার ক্যাডার বাহিনী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ নিয়ে এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা নৌকা মার্কার সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাতে নাওড়া এলাকায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় মোশা বাহিনী।

রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ১২ জন ও অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে নাওড়া পূর্বপাড়া বাজারের রানা মার্কেটের সামনে ফাঁকা জায়গায় নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প বসানো হয়। ওই ক্যাম্প নিয়ে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থকরা দীর্ঘদিন ধরে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করে আসছিল। তারা নৌকার সমর্থকদের প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহজাহান ভূঁইয়াসহ তার সমর্থকরা নাওড়া পূর্বপাড়া বাজারে নৌকা প্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পের সামনে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। এ সময় শাহজাহান ভূঁইয়ার সমর্থক আসামি রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা, তাদের সহযোগী আনোয়ার হোসেন, আলী আজগর, সাখাওয়াত উল্লাহ, নাজমুল, স্বাধীন, নিরব, জয়নাল, আমির হামজা ওরফে ভুট্টু, নিলু, সোবাহান ও ছনপাড়ার খলিলসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জন আসামি সেখানে উপস্থিত হয়। তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র, দা, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, এসএস পাইপ ও লাঠিসোটা দ্বারা সজ্জিত হয়। আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে একই উদ্দেশ্যে নাওড়া পূর্বপাড়া বাজারে রানা মার্কেটের সামনের ফাঁকা জায়গায় গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের অস্থায়ী নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা করে। তারা ক্যাম্পের ভেতর থাকা একটি ৪২ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন ভাঙচুর করে। এতে ৩৬ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন হয়। একপর্যায়ে উল্লিখিত আসামিরা নির্বাচনী ক্যাম্পে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সকল নেতাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ সময় তারা কেউ নৌকা প্রতীককে সমর্থন করলে তাদের খুন করবে বলে হুমকি দেয়। 

আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর নৌকা প্রতীকের সমর্থকসহ আশপাশের লোকজন পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের লেলিহান শিখায় নির্বাচনী ক্যাম্পসহ ভেতরে থাকা ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট পুড়ে যায়। যার ক্ষতি আনুমানিক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বাদী আরও উল্লেখ করেন, সংবাদ পেয়ে তিনিসহ অন্য নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত শোনেন। পরে তিনি থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এদিকে শুক্রবারের সন্ত্রাসী ঘটনার পর এলাকার ভোটাররা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। মাফিয়া ভূমিদস্যুর আশ্রিত মোশা বাহিনী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর কারণে তারা আতঙ্ক বোধ করছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশার নামে আগে থেকেই ধর্ষণ, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ৪২টি মামলা রয়েছে। এবার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরেও একটি মামলা যুক্ত হলো তার নামের সঙ্গে। এলাকাবাসী এ মামলায় অবিলম্বে মোশা ও তার ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

কে এই মোশা

রূপগঞ্জের আতঙ্ক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাকে গত ১ জুন ভারতে পালানোর সময় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় গত ২১ আগস্ট জামিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পায় মোশা। কিছুদিন ‘আত্মগোপনে’ থেকে মাফিয়া গডফাদারের ছত্রচ্ছায়ায় আবারও সে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে আসে। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় এলাকায় শুরু করে মহড়া। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে ফিল্মি স্টাইলে বিশাল গাড়িবহর ও অবৈধ অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো রূপগঞ্জ। এর বাইরেও মোশার রয়েছে বিশাল টেঁটা বাহিনী ও হাতুড়ি বাহিনী। কেউ তার কথার বাইরে গেলেই তাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহজাহান ভূঁইয়ার পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় বক্তব্যের নামে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে এই মোশা। গ্রেপ্তার হলেও সে রূপগঞ্জ ও রাজধানীর প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির প্রভাবে জামিন পেয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কিছুতেই কাটছে না।

মোশার বডিগার্ডের সংখ্যা কত তার হিসাব নেই। রূপগঞ্জ থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিদর্শক জানান, ‘মোশার সঙ্গে সব সময় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কথিত বডিগার্ড হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী মোশার দলের সদস্যসংখ্যা ৭০ থেকে ৮০। এই সন্ত্রাসীরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তারা ভয়ভীতি দেখায়। এলাকার মানুষ মোশা বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মোশা রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামের মোতালেব ভূঁইয়ার ছেলে। আপন বড় ভাইকে খুনের মধ্য দিয়ে অন্ধকার জগতে পা রাখা মোশারফ হোসেন ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন ধরে তারা রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল, ডাকাতি, মাদক, অস্ত্র ব্যবসা আর লুটপাট চালিয়ে আসছে। 

মোশার বিরুদ্ধে গত ১ জুন রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন এসআই আমিনুর রহমান। মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়। এজাহারে মোশা ও তার বাহিনীর ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়। 

ওইদিনই স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মোশাসহ তার বাহিনীর ৩৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০-৭০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। বাদীর অভিযোগÑ পিস্তল, ককটেল, লোহার রড, চাপাতি, রামদা নিয়ে গ্রামবাসীকে ঘেরাও করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মোশা বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে তারা গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা