মহিউদ্দিন আহাম্মেদ, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:২৭ এএম
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৯ পিএম
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চানপুর চা বাগানের জামটিলায় শনিবার পথসভায় ব্যারিস্টার সুমন। প্রবা ফটো
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বাজারের উত্তর দিকে হলুদ রঙের দোতলা বাড়ির সামনে তরুণদের জটলা। সাদা শামিয়ানায় প্রায় ঢাকা পড়া বাড়িটি তাই দূর থেকে নজরে পড়ছে। কাছে যেতেই স্পষ্ট হতে থাকে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সারি সারি পোস্টার-ব্যানার।
ভিড় ঠেলে ফটক দিয়ে প্রবেশ করা মাত্রই নাকে আসে রান্নার ঝাঁঝালো গন্ধ। আঙ্গিনার দক্ষিণ দিকে ডেকেতে চড়ানো হয়েছে খিচুড়ি। বড় এই চুলার পাশে দুটি কেতলিতে অনবরত পানি গরম হচ্ছে। চয়ের কাপের টুংটাং শব্দে মুখর চারপাশ। রান্না শেষ হওয়ার আগে উষ্ণ চায়ে নিজেকে চাঙ্গা করে নেওয়ার চেষ্টা সমর্থক-অনুসারীদের।
সবার হাতে হাতে চা তুলে দিচ্ছিলেন কালাম মিয়া। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সকাল থেকে খিচুড়ি ও চা তৈরির পালা শুরু হয়। যারা যারা উনার বাসায় আসেন তারা সবাই খেতে পারেন। রাত ১২টা পর্যন্ত এভাবে চলে।’
কথা শেষ না করেই চা বানাতে ফের মন দেন কালাম মিয়া। তাকে আর বিরক্ত না করে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েন প্রতিবেদক। নিচতলায় নেতাকর্মীদের ভারী পদচারণা। লিফলেট নিয়ে প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে বের হওয়ার প্রস্তুতি চলছে তাদের। সব মিলে পুরো বাড়িটি পরিণত হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্পে।
সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই দেখা হয় ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে। মৃদ হেসে তিনি বসার জায়গা দেখিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরই সাদা পাজেরো গাড়ি নিয়ে রামগঙ্গা চা বাগানের উদ্দেশে বের হয়ে পড়েন তিনি। তিনটি গাড়িতে করে তাকে অনুসরণ করতে থাকেন সমর্থকরা। শনিবার তার প্রচারসঙ্গী হন এই প্রতিবেদকও।
বাড়ি থেকে কমবেশি ৭ কিলোমিটার দূরের বাগানটিতে পৌঁছাতেই সুমনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন চা শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে নিজেকে সেলফিবন্দি করেন প্রার্থী। পরে ভোটারদের উদ্দেশে কথা বলেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে এমন কাজ করব, মাধবপুর-চুনারুঘাটের মেয়ে-ছেলেকে বিয়ে করার জন্য বাইরের লোকজন লাইন দেবে। আমি এসেছি, মাধবপুর-চুনারুঘাটের ইতিহাস পরিবর্তন করে দেব। ৩৭ হাজার আমের চারসহ ৪৯টি ব্রিজ তৈরি করেছি। মাহবুব আলী ভাই পেয়েছেন শেখ হাসিনার নৌকা, আর আমি পেয়েছি শেখ হাসিনার দোয়া। আপনারা ৭ জানুয়ারি ৮ ঘণ্টা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন। আর আমি আগামী ৫ বছর আপনাদের পাহারা দেব। আমি নির্বাচিত হলে বাগানের সব সমস্যা সমাধান করে দেব।’
রামগঙ্গা বাগারে চা শ্রমিক পান তাঁতী বলেন, ‘সুমন সাহেব আমাদের আন্দোলনের সময় খাবার দিয়েছেন। আমরা সে কথা ভুলিনি। আমরা সুমন সাহেবকে ভোট দেব।’
প্রায় ঘণ্টাখানেক এই বাগানে অবস্থানের পর সুমন ছুটতে থাকেন চানপুর চা বাগানের জামটিলার দিকে। সেখানেও তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন ভোটাররা। শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঈগল মার্কায় ভোট চান সুমন।
প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি নৌকার বিপক্ষে না, আমি নৌকার মাঝির বিপক্ষে। আপনারা আমার ঈগল মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে আমিও হব নৌকা মাঝি। আর আপনাদের এখানে স্কুল নেই, রাস্তা নেই, আমার জানা ছিল না। নির্বাচিত হলে আপনাদের স্কুল, রাস্তা করে দেব।’
চা শ্রমিকরা তাকে ভোট দেওয়ার আশ্বাস দিলে সুমন যান সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাছ ৮ নম্বর চা বাগানে। সেখানে গণসংযোগ শেষে দুপুরের খাবার খেতে চুনারুঘাটে ফেরেন সুমন। তার পৌঁছানোর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে প্রার্থীর পৈতৃক ভিটা। তরুণ এই ভোটারদের অনেকেই সুমনের ফুটবল একাডেমির সদস্য। তারা বিশ্বাস করেন, এবারের নির্বাচনে ঈগল প্রতীক জনগণের ম্যান্ডেট পেলে পাল্টে যাবে চুনারুঘাট। স্মার্ট বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত হবে চা বাগান বেষ্টিত এই জনপদ।
শনিবার বিকাল ৪টার দিকে বাসভবন ছাড়ার আগে সুমনের সঙ্গে কথা হয় আরেকবার। সন্ধ্যার পর আবারও গণসংযোগে বের হবেন জানিয়ে সফরসঙ্গী হওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি তিনি।