খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া (নাটোর)
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০০ পিএম
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে সরকারি তিন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, কোনো ধরনের তথ্য না জানিয়ে পৌরসভা এই ড্রেন নির্মাণ করায় ভেঙে পড়েছে সমীনাপ্রাচীর; ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ভবনও। এ ঘটনায় ড্রেন নির্মাণ বন্ধ এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা যায়, বাগাতিপাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাউকে অবহিত না করেই একটি কৃষি মাঠের পানিনিষ্কাশনের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে মালঞ্চি রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের জমিতে ড্রেন নির্মাণ শুরু করেছে। ড্রেন নির্মাণের মাটিখননে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ মিটার সীমানাপ্রাচীরসহ বিএডিসির একটি পুরাতন ভবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সীমানাপ্রাচীরের দেয়ালটি লোহার রড ও নাইলনের দড়ি দিয়ে কোনো রকমে বেঁধে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। কোনো দপ্তরকে না জানিয়ে তাদের জমিতে পৌরসভার এহেন ইচ্ছা-স্বাধীন কাজে দপ্তরপ্রধানদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। তারা দ্রুত ড্রেন নির্মাণ বন্ধ ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও করেছেন।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে পৌর এলাকার কৃষিজমির ফসল রক্ষার্থে পৌরসভার বাস্তবায়নে করোনা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে মালঞ্চি রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজটি করছে নাটোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাপ কনস্ট্রাকশন। ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকেই ওই স্থান দিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল। পৌরসভা ওই জায়গাতেই ড্রেন করছে।
পেড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, ‘স্কুলের সীমানার ভিতরে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠের পূর্ব-পশ্চিম পাশের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে ড্রেনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর ও গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
বিএডিসির রাজশাহী অঞ্চলের ডিডি কেএম গোলাম সরোয়ার জানান, ড্রেনটি নির্মাণের বিষয়ে পৌরসভা থেকে তাদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ইবনে জামান ফয়জুল কবির তিতাস জানান, ড্রেনের কিছু অংশ সমবায় অধিদপ্তরের সম্পত্তির ওপর দিয়ে গেছে। ওই সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব তার দপ্তরের ওপর। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সেই সম্পত্তিতে ড্রেন নির্মাণের বিষয়ে তার দপ্তরকে জানায়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ড. সাবরিনা আনাম জানান, ড্রেন নির্মাণ বিষয়ে পৌরসভাকে কোনো অনুমতিপত্র দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র পাওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাপ কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকার গোলাপ হোসেন বলেন, ‘প্রাচীর ঘেঁষে ড্রেনের লে-আউট দেওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি পৌরসভা ভুল করেছে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।’
বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র শরিফুল ইসলাম লেলিন বলেন, জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে কাজটি করা হচ্ছে। এতে কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীন বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ পৌরসভার। এই বিষয়ে কী করণীয় তা পৌরসভা দেখবে।