× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সাত লাখ মানুষের সেবায় ৭ চিকিৎসক

হাসিব আল আমিন, নোয়াখালী

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৫ পিএম

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা। সম্পতি তোলা। প্রবা ফটো

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রোগীরা। সম্পতি তোলা। প্রবা ফটো

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। বিচ্ছিন্ন এই ভূখণ্ডে বসবাসরত প্রায় সাত লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে মিলেছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবা নিতে আসা মানুষদের।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু হওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির। পরে প্রয়োজন মেটাতে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায়ও উন্নীত করা হয়। কিন্তু শয্যা বাড়লেও বাড়েনি জনবল। এতে সেবার মান আর বাড়েনি। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ৭৯টি পদের বিপরীতে আছে মাত্র ২৬ জন। ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৫৩টি পদ। ৩১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ জন। তার মধ্যে ছুটিজনিত কারণে উপস্থিত থাকেন মাত্র সাতজন চিকিৎসক। অন্যদিকে ৩০ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১৩ জন। মিডওয়াইফ তিনজনের জায়গায় নেই একজনও। একইভাবে সবগুলো পদ খালি সিকিউরিটি গার্ডের। তিনজন ওয়ার্ড বয়ের মধ্যে আছেন দুজন। অন্যদিকে আয়া দুজন থাকার কথা হলেও আছেন একজন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে আলট্রাসনোগ্রাফি ও ইসিজি প্রভৃতি যন্ত্রপাতিগুলো অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে সাড়ে তিনশতাধিকের বেশি রোগী আসে, শয্যাগুলোতে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। 

চরকিং ইউনিয়ন থেকে আসা রাহেলা বেগম বলেন, আমাদের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাইসি সুস্থ করার জন্য। কিন্তু উল্টো অসুস্থ হয়ে যায়। ডাক্তারকে আসতে বললে আসে না। উল্টো আমাদের সঙ্গে রাগ করে।

আবদুর রহমান নামে চিকিৎসা নিতে আসা আরেকজন সেবাপ্রত্যাশী বলেন, আমরা সাত লাখ মানুষ এই দ্বীপে বসবাস করি। আমাদের একমাত্র ভরসার স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যদিও এটা পুরাতন ভবন। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে এটাকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয়েছে। এটাকে যদি নতুন করে করা হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। 

মোমিন ইসলাম নামের আরেক রোগী বলেন, এখানে পর্যাপ্ত সিট নেই। ভালো ডাক্তার নাই। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। দ্বীপ উপজেলা হওয়ায় এখান থেকে সহজে অন্য কোথাও চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগও নাই। নতুন ভবন হলে আমাদের জন্য ভালো হতো। চিকিৎসক নিয়োগ দিলে আমাদের উপকার হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নার্স জানান, হাসপাতালে এত কম জনবলের বিপরীতে বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়া খুবই কঠিন। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার জন্য। নতুন করে জনবল নিয়োগ দেওয়া ছাড়া সেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় হাতিয়ার ৭ লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল অপ্রতুল বলে ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েছি। এ ছাড়াও এটিকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট করার পাশাপাশি জনবল সংকট দূর করতে দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। তবে যদি আমাদের সাগরিয়া, বুড়িরচর বা জাহাজমারা ইউনিয়নের দিকে আরেকটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট করা হয় তাহলে আমাদের উপকার হবে। সেদিকে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৌমেন সাহা বলেন, সাত লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার জায়গা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেটি পূর্বে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ছিল। ৩১ থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও গড়ে শতাধিক ভর্তি রোগী ও বহিঃবিভাগের পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা চিকিৎসক আছেন মাত্র সাতজন। ৩১ শয্যার অবকাঠামো থাকার কারণে রোগীদের ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া লাগে। যা সত্যিই মানবেতর। আশা করব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে সাত লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করবেন।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, হাতিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এটি জনসংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এই উপজেলা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হওয়ায় চাইলেই বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে না। স্বাস্থ্যসেবা যদি পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে দিতে পারি তাহলে সাধারণ মানুষের খুব উপকার হবে। তা ছাড়া এখানে প্রতিদিন ২০০-৩০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। যেটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হয়। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে যদি ১০০ বা ২০০ শয্যায় করা যায় তাহলে সাধারণ জনগণ আরও বেশি উপকৃত হবে। সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, মূল ভূখণ্ডের বাইরে হাতিয়ার দ্বীপের একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় গেছি এবং সংসদেও কথা বলেছি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে। ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় করতে পারি তাহলে রোগীদের কষ্ট হবে না এবং চিকিৎসক সংকট হবে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা