প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২২ এএম
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৯ পিএম
শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশা বহিরাগতদের নিয়ে রূপগঞ্জের ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। ছবি : সংগৃহীত
তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশা বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিয়ে বেড়াচ্ছে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা নানারকম হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কেটলি মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের নির্দেশ দিচ্ছে মোশা। একই সঙ্গে নৌকায় ভোট দিলে ভোটারদের এলাকাছাড়া করা, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং সন্তানদের অপহরণ করার কথা বলে শাসানো হচ্ছে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বেশি।
রূপগঞ্জজুড়ে এসব মহড়ায় মোশার সঙ্গে যোগ দিয়েছে ভাটারা, ছোলমাইদ, সাঁতারকুল, নর্দা, বাড্ডা, বরুণা, কুড়িল ও নাওড়াসহ বিভিন্ন এলাকার তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী ও মাদক কারবারিরা। মোশা বাহিনীর ভয়ে এরই মধ্যে রূপগঞ্জের অনেক ভোটার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। যারা এখনও এলাকায় আছেন তারা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মোশার মহড়া ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভোটের আগেই মোশা ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোশা বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের বড়ালু, বরুণা, ছাতিয়ান, হরিণাগ্রাম, নগরপাড়া, ইছাখালী, নাওড়া, নিমেরটেক, পূবগাঁও, চনপাড়া, বড়ালু পাড়াগাঁও, কেরানীগঞ্জ, মাঝিনা, পশ্চিমগাঁও, ছনপাড়া, উলাব, ডাক্তারখালি, বসুলিয়া, কায়েমসাইর, চানের টেক, খামারবাড়া, বাগবাড়ি, নয়ামাটি, তালাশকুটসহ বিভিন্ন গ্রামে মহড়া দিয়েছে। মোশার সঙ্গে যারা ছিল তাদের অধিকাংশই বহিরাগত সন্ত্রাসী। মোশার সঙ্গে থাকা অধিকাংশ লোকজনকে স্থানীয় বাসিন্দারা চিনতে পারছেন না। মোশার এই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কায়েতপাড়ার আনোয়ার হোসেন, আলী আজগর, সাখাওয়াত উল্লাহ, নাজমুল, স্বাধীন, নিরব, জয়নাল, আমির হামজা ওরফে ভুট্টো, নিলু, সোবাহান, খলিলসহ অনেকে। তারা দা, ছেনি, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, এসএস পাইপ, লাঠিসোটাসহ দেশীয় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। এর ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিতে পারবেন কি না বা কেন্দ্রে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
ইছাখালী গ্রামের আলী হোসেন বলেন, আমরা উন্নয়নের মার্কা নৌকায় ভোট দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই। কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলমের ছত্রছায়ায় থেকে মোশা বাহিনীর প্রধান মোশা, ভুট্টো, আনোয়ারসহ তাদের দলবল আমাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে আমাদের এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আলী হোসেন আরও বলেন, একাত্তর সালে যেভাবে রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে, আগুন লাগিয়েছে- সেভাবেই মোশার স্থানীয় সহযোগীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আমাদের ঘরবাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা। আমরা আওয়ামী লীগ করি। আজীবন নৌকায় ভোট দিয়েছি। এখন মোশা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের হুমকি দিয়ে বলেছে, নৌকায় ভোট দিলে আমরা আর এলাকায় থাকতে পারব না। আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে।
নাওড়া গ্রামের নারী ভোটার দীপালি সাহা বলেন, মোশা ও তার ক্যাডার বাবুসহ কয়েকজন আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েছে যেন আমরা কেন্দ্রে না যাই। নৌকায় ভোট দিলে আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেবে বলেছে। ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে।
বড়ালুপাড়াগাঁও এলাকার মনির হোসেন বলেন, এবার আমরা ভোট দিতে পারব কি না জানি না। মোশা আমাদের এলাকায় মহড়া দিয়েছে। রাস্তায় আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বলেছে, নৌকায় ভোট দিলে পরিণতি ভালো হবে না- মেরে লাশ বালু নদে ভাসিয়ে দেবে। আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।
গোলাকান্দাইল গ্রামের প্রদীপ কুমার বলেন, মোশার নেতৃত্বে বসুন্ধরা গ্রুপ ও শাহজাহান ভূঁইয়ার এই মাস্তান বাহিনী হিন্দু ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তারা বলছে, কেন্দ্রে গেলে হাত-পা ভেঙে দেবে। বাড়িঘরে আগুন দেবে।
মোশা বাহিনীর ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মহড়া দেওয়ার ঘটনায় এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে মোশার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার আসামি হওয়ায় আমরা তাকে খুঁজছি। এলাকায় দেখামাত্র পুলিশকে জানাতে অথবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, নির্বাচনকালে কোনো সন্ত্রাসী ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টা করলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি জানান, রূপগঞ্জে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স রূপগঞ্জে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘তারপরও ছোটখাটো দুয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি, আসামি গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। কেউ যাতে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। আশা করছি শুধু রূপগঞ্জ নয়, পুরো নারায়ণগঞ্জে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে।’