ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২৬ এএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৩৬ এএম
শীত নিবারণে শিশুরা আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে আছে। প্রবা ফটো
ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের তাপমাত্রা নেমেছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। হাড় কাঁপানো শীতে দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। হিমালয়ের কাছে অবস্থান হওয়ায় এ জেলায় প্রতিবছর শীতের তীব্রতা বেশি হয়।
ঠাকুরগাঁওয়ে তাপমাত্রা নিরূপণের কোনো কার্যালয় নেই। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রতিদিন তাপমাত্রা পরিমাপ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে এ জেলায়। রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় জেলায় সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮০ শতাংশ।
প্রতিবছর শীতের মৌসুমে বিপাকে পড়ে এই অঞ্চলের নিম্ন ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষেরা। এবারও প্রচণ্ড শীতে সাধারণ মানুষ কাজে যেতে পারছে না। অতিরিক্ত শীতের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
সদর নারগুন ইউনিয়নের দিনমজুর নাজুমল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে এত শীত আর ঠান্ডায় কাজ করিবা পারি না। হাতটা মনে হয় অবশ হয়ে আসেছে। তাও কাজ করিবা হুবে। কাজ না করিলে খাম কী।’
আকচা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এমন শীত আর ঠান্ডা যে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। সরকার বলে প্রতিবছর কম্বল দেয়। আমরা কোনো দিন একখান কম্বল পাইনি।’
আরেক কৃষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘এত শীতে বীজতলা নিয়ে বিপাকে আছি। এই শীতে বীজতলার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
পৌরসভার গোয়ালপাড়ার রিকশাচালক আবু বক্কর বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে তেমন শীত ও ঠান্ডা ছিল না। সকাল আর রাতে হালকা ঠান্ডা ছিল। দুপুরে গরম কাপড় খুলে রাখতে হতো। জানুয়ারি মাস শুরু থেকে অনেক ঠান্ডা আর শীত পড়া শুরু হইছে। রিকশা চালানোর সময় হাত কাজ করে না। কামাই কমে গেছে। বাসা থেকে মানুষজন তেমন বের হয় না।’
সদর সালন্দর ইউনিয়নের সুলতান আলী বলেন, ‘আমরা সকাল ৮টার দিকে কাজে যাই। সকাল এত কুয়াশা সামনে একটু দেখা যায় না। তাও কাজ করতে হবে। না কাজ করলে খাব কী। সংসার চালাব কীভাবে। যতই ঠান্ডা আর কুয়াশা পড়ুক আমাদের কাজ করে খেতে হবে। তবে এত শীতে মানুষ কাজেও নিতে চায় না।’
আখানগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা বিশ্বজিত সরকার বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বেশ ঠান্ডা। বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। কাজ করা খুব কষ্টদায়ক। তারপরও করতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই।’
ঠাকুরগাঁও টার্মিনালের ট্র্যাকের ড্রাইভার ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে এত কুয়াশা যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাইতে হচ্ছে। অনেক সময় কুয়াশার কারণে রাস্তা ভালোভাবে দেখা যায় না। এতে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। আমাদের ড্রাইভারদের সচেতন হয়ে গাড়ি চালানো উচিত।’
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতিবছর শীতজনিত রোগে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। শীত আসলেই শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শীতের মৌসুমে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা না লাগানোর জন্য মায়েদের সচেতন হতে হবে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘জেলার শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের জন্য কম্বল বিতরণ শেষের দিকে। প্রায় ১ লাখ কম্বল বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। দুটি বেসরকারি সংগঠন আমাদের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করেছে।’