মো. জিয়াউর রহমান, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৮ পিএম
সার-কীটনাশক ছাড়াই সবজি চাষে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন কুষ্টিয়ার একদল নারী। জেলার দৌলতপুর উপজেলায় কৃষি বিভাগের ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ প্রকল্পের সহায়তায় ‘আকাশি নারী দল’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য এই নারীরা। তারা সবজি চাষ করছেন নিজেদের বাড়ির আঙিনায়।
সরজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার শীতলাইপাড়া গ্ৰামের ১২ জন নারী এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন। দলনেতা রুলি খাতুন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাড়ির পাশে জাগাটা জঙ্গল হয়ে পড়ে থাকত। ট্রেনিং নিয়ে এখন আমরা সেখানে বিষ ছাড়াই হরেক রকম শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদন করি। নিজে খাই এবং পাড়াপ্রতিবেশীদের দিয়ে থাকি। তিন মাস ধরে বাজারের সবজি কেনা লাগেনি। মাঝেমধ্যে কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করে টাকা হয়। তখন আমি আনন্দ পাই।’
রুলিদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, ঝকঝকে তকতকে বাড়ির আল্পনা আঁকা মাটির দেয়ালে ঝুলছে সারি সারি প্লাস্টিকের বোতল। এগুলোতে রয়েছে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ। নাম রাখা হয়েছে বীজ ব্যাংক। এখান থেকে বীজ নিয়ে সংগঠনের বাইরের নারীরাও লাউ, শিম, কুমড়ার গাছ লাগান। রুলি খাতুনের প্রায় দেড় শতক জমির সবজিক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, নানা রকমের সবজির গাছ সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মূলা, পালংশাক, লালশাক, বরবটি, ঝিঙে, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া ইত্যাদি। ভেড়ামারা মহিলা অনার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করা রুলি খাতুন বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে যাওয়ার আগে তারা কোনো দিন কোনো সরকারি অফিসে যাননি। তাই মনে ভয় ছিল, কিন্তু অফিসে গিয়ে সব ভয় দূর হয়ে যায়।
তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা জমিতে বেড তৈরি করে চাষ করতে শিখেছেন। কৃষি অফিস তাদের জৈবসার ও ১৭ ধরনের বীজ দিয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধ করার জন্য শিখিয়েছে নিমপাতা ও ছাই ব্যবহার করা। তাই তারা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, প্রতিবেশীদের দিচ্ছেন, প্রয়োজনে বিক্রি করতে পারছেন। তাদের দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
রুলি খাতুন বলেন, আকাশি নারী দলের সদস্যরা গ্রামের নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে তোলার কাজও করছেন। যেমন, ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরির জন্য আটটি পরিবার রিং-স্ল্যাব পেয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে গ্রামের সবাইকে এ সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া গ্রামের কয়েকজন নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা, সরকারি সহায়তার চাল, ওএমএস এবং টিসিবি পণ্য কেনার সুবিধা পেয়েছেন। তারা এখন নিজেদের অধিকার বিষয়ে অনেক সচেতন।
দৌলতপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন শীতলাইপাড়া ও শশীদারপুর গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।