শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:৫০ পিএম
বাগেরহাটের শরণখোলায় শতবর্ষী একটি রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে ১৩টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রামের মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খান ও তার স্ত্রী তুলি বেগম ওই রাস্তাটি তাদের জমি দাবি করে সেখানে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। ওই রাস্তার জমি অভিযুক্ত দেলোয়ার খানের পূর্বপুরুষরা স্থানীয়দের চলাচলের জন্য দান করে গেছেন বলে জানা গেছে। এখন রাস্তার মাঝখানে দেয়ালের কারণে ১৩টি পরিবারের শিক্ষার্থী, বয়স্ক, প্রতিবন্ধি, শিশুসহ এই রাস্তা ব্যবহার করা আশপাশের গ্রামের মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রামের আমিনুর খানের বাড়ি থেকে রামচন্দ্র মিস্ত্রির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটির দের্ঘ্য প্রায় ৭০০ ফুট। ওই রাস্তাটি স্বাধীনতার আগে থেকেই স্থানীয়রা ব্যবহার করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিআর ও হতদরিদ্র প্রকল্প থেকে কয়েকবার রাস্তাটি সংস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু মাওলানা দেওয়ার খান হঠাৎ রাস্তার জমি নিজের দাবি করে সেখানে পাকা দেয়াল নির্মাণ করেন।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে সেখানে আরও উঁচু করে ইট গাথা শুরু করলে পুলিশ গিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু চলাচলের পথ বন্ধই রয়ে গেছে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, ষষ্ঠ শ্রেণির জাকারিয়া, বুশরা আক্তার, দ্বিতীয় শ্রেণির সুষ্মিতা ও হালিমা বলে, রাস্তায় দেয়াল থাকায় তাদের স্কুলে যেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার ওপর থেকে দেয়াল সরিয়ে নিয়ে তাদের স্কুল-মাদ্রাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানায় এই শিশু শিক্ষার্থীরা।
মতিয়ার রহমান নামের ৭১ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, তিনি ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে কাচামাল বিক্রি করেন। চলার পথ বন্ধ করে দেওয়ায় তিনি ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছেন না। এখন সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাস্তাটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্য দিলিপ কুমার মিস্ত্রি, ইব্রাহিম তালুকদার, জামাল শিকদার, পান্না তালুকদার ও মতি হাওলাদার বলেন, প্রায় একশ বছর আগে তাদের বাবা-দাদার আমল থেকেই এই রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাওলানা দেলোয়ার খানের পূর্বপুরুষরা এই জমি জনগণের চলাচলের জন্য দিয়ে গেছেন। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন এখন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করাসহ রাস্তার মাঝখানে পাকা দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এখন তারা ১৩ পরিবার একেবারেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।
তারা বলেন, তাদের পরিবারগুলো হতদরিদ্র ও দিনমজুর। কেউ অন্যের বাড়ি ও জমিতে কাজ করেন, আবার কেউ ভ্যান-ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালান। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হওয়ায় কেউ কোনো কাজ করতে পারছেন না। দেলোয়ার খান ঢাকায় থেকে নির্দেশ দিয়ে তার স্ত্রীকে দিয়ে এই রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।
দেলোয়ার খানের প্রতিবেশি বাচ্চু তালুকদার বলেন, এই রাস্তার বয়স একশ বছরেরও বেশি। দেলোয়ার মাওলানা রাস্তায় দেয়াল তুলে ১৩ পরিবারের চলার পথসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষেরও পথ বন্ধ করেছেন।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. কাওসার আকন বলেন, রাস্তাটি বহু বছরের পুরোনো। এই রাস্তায় সরকারি বরাদ্দ থেকে কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সেখানে দেয়াল তুলে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করায় ১৩টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। দেলোয়ার কারো কোনো কথা শুনতে চান না। তারপরও এ বিষয়ে বসে মিমাংসা করার চেষ্টা করা হবে।
শরণখোলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুব্রত কুমার সরদার বলেন, সকালে রাস্তায় আরও উঁচু করে দেয়ালের কাজ করা শুরু করলে পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন খান রাস্তার জমি তার বলে দাবি করছেন। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করার জন্য উভয় পক্ষকে বলা হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মাওলানা দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নাশকতা, ধর্ষণসহ একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। যে কারণে তিনি এলাকায় থাকেন না।
এ বিষয়ে জানার জন্য মাওলানা দেলোয়ার খানকে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার স্ত্রী তুলি বেগম স্বামীর নামে বিভিন্ন মামলা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এই রাস্তার জমি আমাদের। এখান থেকে কাউকে চলতে দেব না। এখানে আমরা ইন্ডাস্ট্রি করব। তাই রাস্তা বন্ধ করেছি।’