পারভেজ হোসাইন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৬ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:০৮ পিএম
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ইটভাটায় মাটি নিতে সরকারি খালে একাধিক বাঁধ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রায় ৩ শ একর কৃষিজমির উৎপাদন। গত ৪ বছর ধরে শুকনো মৌসুম আসতেই বাঁধ দিয়ে ভাটায় মাটি সরবরাহ শুরু হয়। এ বছরও ফের বাঁধ নির্মাণে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, উপজেলার ভাদুর ইউনিয়নের সুধারাম সরকারি খালের ১ কিলোমিটার অংশে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাঁধের কারণে মধ্য ভাদুর, উত্তর গ্রাম, পশ্চিম ভাদুর ও কেথুড়ী গ্রামের কৃষি মাঠের ৩ শ একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হুমকিতে পড়েছে। কৃষকদের শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় বোরো চাষ ও বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় আমন চাষে চরম দুর্গতিতে পড়তে হয়। এর ফলে গত কয়েক বছর ধরে কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে।
তারা আরও জানান, ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়ার কথিত ভাগিনা ও পশ্চিম ভাদুর গ্রামের মৃত সহিদ উল্যার ছেলে মাটি ব্যবসায়ী সোহেল এ বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত।
রামগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ-সোনাইমুড়ি সিঅ্যান্ডবি খালের বালুয়া চৌমুহনী থেকে সোনাপুর-চিতোষী খালের সুধারাম পর্যন্ত খালটির দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার। যার প্রস্থ ছিল ৩০ ফুট। খালটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, খালটির সুধারাম ব্রিজের পাশে ইটভাটার সামনে, ভাদুর উচ্চ বিদ্যালয় ও পশ্চিম ভাদুর মোল্লা বাড়ি এলাকায় মাটি ও ইটভাটার সুরকি দিয়ে ৩টি বাঁধ দেওয়া আছে। খালটিতে পানি প্রবাহ নেই। খালটি ঘেঁষে পশ্চিম ভাদুর, মধ্য ভাদুর, উত্তর গ্রাম ও কেথুড়ী গ্রামের চারটি কৃষিমাঠের বেশিরভাগ জমি অনাবাদি।
পশ্চিম ভাদুর গ্রামের বিল্লাল, সেলিম, মফিজ মিয়া, মোতালেব হোসেন, মধ্য ভাদুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আলম, টেলু মিয়া, কেথুড়ী গ্রামের গোলাম রসুল, জাহাঙ্গীর, আনোয়ারসহ একাধিক কৃষক জানান, প্রবহমান এ খালটিতে সব সময় পানি থাকত, চাষাবাদ করতে তাদের কোনো সমস্যা হতো না। ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়ার ভাগিনা মাটি ব্যবসায়ী মো. সোহেল ২০২০ সাল থেকে পেশিশক্তির প্রভাব খাটিয়ে খালে বাঁধ দিয়ে, রাস্তা নির্মাণ করে, ফসলি জমিতে পুকুর খনন ও টপসয়েল কেটে ট্রলি দিয়ে ইটভাটায় মাটি আনা-নেওয়া করে আসছে। কেউ এ ব্যাপারে কথা বললে তাকে হুমকি-ধমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দূর থেকে শত শত ফুট ডেলিভারি পাইপ দিয়ে পানি আনতে হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে পানি বেচাকেনাও হয়। তাতে অতিরিক্ত কষ্ট ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। চাষাবাদকৃত ফসল শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে দিয়েছেন।
তারা আরও জানান, গত বছরও পানির অভাবে তাদের লাখ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তারা দ্রুত বাঁধ তিনটি অপসারণ করে খালটি উন্মুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
অভিযুক্ত মো. সোহেল জানান, ৪ বছর আগে কৃষকদের উপকারের জন্য বাঁধগুলো দিয়েছি। আমি এখন আর মাটির ব্যবসা করি না। বাঁধগুলো কেটে দিলে সমস্যা নাই।
৩নং ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন জানান, বাঁধগুলো
অনেক আগে দেওয়া হয়েছে। তার সময়কালে তিনি কাউকে সরকারি খালে বাঁধ দিতে দেন নাই। এ বাঁধগুলো অপসারণ করা খুবই জরুরি। তিনি উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাঁধ অপসারণ করার উদ্যোগ নিবেন।
ভাদুর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি অফিসার তুহিন অধিকারী জানান, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানির অভাবে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন না। তাদের উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। কৃষকরাও তাদের এ সমস্যার কথা জানিয়েছেন। খালের বাঁধগুলো কেটে দেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। এতে চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমরা উপকারভোগী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বাঁধগুলো কেটে খালটি উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করব।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সরকারি খালে বাঁধ দেওয়ার কোনো নিয়ম নাই। এটি একটি অপরাধ। খালে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকরা আবেদন করেছে। এ বিষয় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।