× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খুলনা নগরী

অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়ার চাপে ৩ লক্ষাধিক ভাড়াটিয়া

সুনীল দাস চৌধুরী, খুলনা

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:১০ এএম

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ২২:১৯ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

খুলনা নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আমিরুল ইসলাম নতুন বছরের শুরুতে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির নোটিস পেয়েছেন। দেড় হাজার বর্গফুটের তিন রুমের ফ্ল্যাটের ভাড়া ১০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। নতুন বছরের শুরুতে আমিরুলের জীবনযাত্রার খরচ বাড়ল আরেক দফা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। আমিরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে যে বাসায় থেকেছি, বছরের শুরুতে সবখানে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বাসাভাড়া যে হারে বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়ে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাজার খরচ দফায় দফায় বেড়ে এমন পর্যায়ে গেছে, এখন আর পণ্য তালিকায় কাটছাঁট করারও জায়গা নেই।

নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার কলেজ শিক্ষক ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, প্রতিবছর বাসাভাড়া ১ হাজার টাকা করে বাড়ে। এবার বাড়ানো হয়েছে দেড় হাজার। এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে বরং বাড়তি ভাড়ায় না থাকতে চাইলে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন বাড়ির মালিক। কিন্তু চাইলেই তো হুট করে বাসা বদল সম্ভব না। তাই বাড়তি ভাড়া মেনে নিতে হচ্ছে। এখানে বাসাভাড়া বাড়ানোর কোনো নিয়মকানুনের বালাই নেই। সিটি করপোরেশন ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিপুল সংখ্যক ভাড়াটিয়ার দুর্ভোগ লাঘবে যেনতেনভাবে ভাড়া বৃদ্ধির এই প্রবণতা বন্ধ ও ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষায় যথাযথ আইন ও পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আমিরুল ইসলাম ও ইমতিয়াজ হোসেনই নয়, ১৬ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা মহানগরীর ৩ লক্ষাধিক ভাড়াটিয়ার অবস্থা প্রায় একই। নগরীর নিরালা, সোনাডাঙ্গা, মুজগুন্নি, খালিশপুর হাউজিং, হাজী মহসিন রোড, শেরেবাংলা রোড, টুটপাড়া, বসুপাড়া, ইকবাল নগর, দৌলতপুরের দেয়ানা, পাবলা, রায়ের মহল, মহেশ্বরপাশাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার ১৫টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বছর শুরুর আগেই অনেক বাড়িওয়ালা বা ফ্ল্যাটমালিক বাসাভাড়া বাড়ানোর নোটিস দিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে বাড়তি এ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দামসহ জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে এমনিতেই সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে খুলনা নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বাসাভাড়া বাড়ছে নতুন করে। বছরের শুরুতেই এলাকাভেদে বাসাভাড়া বেড়েছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও ফ্ল্যাটের আকারভেদে ভাড়া বেড়েছে ৪ হাজার টাকা। যারা ভাড়াবাসায় থাকেন, তাদের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় মাস শেষে ভাড়া দিতে। 

নগরীর বিভিন্ন এলাকার ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন, খরচের তুলনায় আয় বেশি বাড়লে তখন খরচ বাড়লেও মানুষের তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দেশে গত দেড় বছর মূল্যস্ফীতির চেয়ে মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার কমে গেছে। সেই সঙ্গে অযৌক্তিকভাবে বাসাভাড়া বৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ চরম অস্বস্তিতে ভুগছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সদ্যবিদায়ি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হিসাব দিয়েছে। ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তার মানে ২০২২ সালে একজন মানুষের যাবতীয় খরচ যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ৪৮ পয়সায়। কোনো পরিবারের যদি ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার টাকা বাজার খরচ হয়, তাহলে ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৮৪৪ টাকায়।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির মনে করেন, মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে। এখন বাড়তি বাসাভাড়া সংসার খরচের চাপ আরেক দফা বাড়াবে।

এদিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এমএ খালেক ভূঁইয়া বাসাভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকেরা নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, গৃহঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বৃদ্ধিসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে বলেন, সবাই বাড়িভাড়া বাড়ান না। তবে বাড়িভাড়ার সঙ্গে পরিষেবার খরচও যুক্ত থাকে। সরকার যখন পরিষেবার খরচ বাড়ায়, সেটা তখন বাড়িভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। একইভাবে নিরালা, ইকবালনগর, শীতলাবাড়ী, বাগমারা, টুটপাড়া, গোবরচাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিকদেরও অভিযোগ সরকারি পরিষেবা ও দ্রব্যমূল্যের কারণে বাড়িভাড়া বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। 

আইনের প্রয়োগ চান নাগরিক আন্দোলনের নেতারা

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ নামে দেশে একটি আইন আছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের তেমন প্রয়োগ নেই। আইন বাস্তবায়নে এখনও কোনো বিধি করেনি সরকার। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামের একটি সংগঠন জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। রিট আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে রুল ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই আদালত রায় দেন। রায়ে বলা হয়, বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেদের সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। আইনটি কার্যকরে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পাবেন না। রায়ে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রায় এক দশক পার হলেও সরকার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকর করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। 

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) খুলনার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, খুলনা শহরে বাড়ির মালিকদের তিনগুণেরও বেশি ভাড়াটিয়া রয়েছে। তারা একটা শক্তি হলেও দুঃখের বিষয় তাদের কোনো সংগঠন নেই। বাড়িওয়ালারা যেমন তাদের সুবিধাগুলো আদায় করে নেয়, তেমনি ভাড়াটিয়াদেরও কিছু অধিকার আছে। বাড়িওয়ালারা প্রতিবছর তাদের ইচ্ছামতো বাড়িভাড়া বাড়াতে পারেন না। বাড়িভাড়ার ক্ষেত্রে যেমন বাড়িওয়ালাদের দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি বাড়িভাড়া নেওয়ার সময় ভাড়াটিয়াদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। 

সচেতন নাগরিক সমাজ (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা জানান, অবশ্যই বাড়িওয়ালাদের আইন মেনে ভাড়া বাড়ানো উচিত। দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের ক্ষেত্রেই একই আর্থিক চাপ থাকে। তাই বাড়িওয়ালাদের বাড়িভাড়া অযৌক্তিকভাবে বছর বছর বাড়ানো উচিত নয়। যদি সরকার জনকল্যাণে কাজ করতে চায়, তাহলে বাড়িভাড়ার মতো জনকল্যাণমূলক আইনগুলোর অসম্পূর্ণতা দূর করে যথাযথ বাস্তবায়ন করা উচিত। তাহলেই এসব আইন পরিপূর্ণভাবে মানুষের কল্যাণে লাগবে। 

খুলনা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সানজিদা বেগম জানান, খুলনা সিটি করপোরেশন শুধু খানাভিত্তিক ট্যাক্স ধার্য ও সংগ্রহ করে থাকে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকরা বাড়িতে অবস্থান করলে প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৬ টাকা হারে এবং ভাড়াটিয়া অংশের জন্য মাসিক ভাড়ার ১.৬ গুণ পরিমাণ বার্ষিক ট্যাক্স আদায় করা হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনে ভাড়াটিয়াদের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা বা আইন নেই। যে কারণে ভাড়া প্রদান ও বৃদ্ধি-সংক্রান্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেন না বলেও তিনি জানান।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা