পঞ্চগড় প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৩২ এএম
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:১০ পিএম
ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলছে যানবাহন। প্রবা ফটো
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের দাপট। জেলার ওপর দিয়ে তিন দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে শুরু হয়েছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় পথঘাটসহ চারদিক। রাত থেকে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সকাল থেকে মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।
গত কয়েক দিনের তুলনায় তাপমাত্রা কমে আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলায় তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে সকাল ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ৫ থেকে ১৬ ডিগ্রিতে ওঠানামা করছে। তবে দুই দিন ধরে দিনের বেলা সূর্যের দেখা মেলায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিন্তু সূর্যের কাঙ্ক্ষিত উত্তাপ না থাকায় দিনভর শীত অনুভূত হয়। বেলা গড়িয়ে বিকাল হতেই আবারও শুরু হয় শীতের প্রকোপ।
এদিকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতনিবারণের চেষ্টা করছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তবে মাঘের এ শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতের কারণে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারছে না তারা। ফলে অনেক সময় কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের নলেহাপাড়ার দিনমজুর সুবলচন্দ্র রায় বলেন, ‘পঞ্চগড়ে কয়েক দিন ধরে খুবই শীতের দাপট। ঘন কুয়াশা আর বাতাসে হাত-পা কোঁকড়া হয়ে যায়। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু কাজ না করলে খাব কী? কাজের সন্ধানে তীব্র শীত উপেক্ষা করে বাইরে বের হয়েছি।’
একই এলাকার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিতা রানী বলে, ‘পঞ্চগড়ে কিছুদিন ধরে খুব শীত। সকালবেলা যখন পড়তে বসি খুবই ঠান্ডা লাগে। শীতের কারণে তো স্কুল বন্ধ। তাই বাসায় বসে পড়াশোনা করছি।’
এদিকে তীব্র শীতে আলু, মরিচ, সরিষাসহ বোরো ধানের বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। শীত মোকাবিলায় কীটনাশক স্প্রে করছে কৃষক।
কৃষক ফটিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘তীব্র শীতের কারণে আলু, মরিচসহ বোরো ধানের বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। বেশি করে কীটনাশক স্প্রে করেও ঠেকানো যাচ্ছে না। আলুতে লেড ব্রাইট ধরেছে। গাছের পাতাগুলো হলদে ও কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে। মরিচ গাছেরও যেন চেহারা নেই। বেশি কীটনাশক স্প্রে করাতে আমাদের খরচ বেশি হচ্ছে। কিন্তু উপায় তো নেই, ফসল তো বাঁচাতে হবে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, ‘এ মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ শুক্রবার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানুয়ারিজুড়ে তাপমাত্রা এমন থাকবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের পর আস্তে আস্তে শীত কমতে থাকবে।’
এদিকে শীত মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে জেলাজুড়ে।
জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া শীতবস্ত্রগুলো উপজেলার মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতরণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার শীতবস্ত্র পাওয়া গেছে। সামনে আরও শীতবস্ত্র বরাদ্দ এলে পর্যায়ক্রমে তা শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’